ইন্টারনেটে জুড়তে মুর্শিদাবাদ ছুটছে এদিক ওদিক

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ইন্টারনেট না থাকায় দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদবাসীর। আর তাই সময় পেলেই এক ট্রেনে কেউ ছুটে যাচ্ছেন বেথুয়াডহরী কেউ ছুটে যাচ্ছেন মোটরবাইকে বীরভূম তো কেউ ছুটছেন মালদাতেও। অন্য ট্রেনে কেউ ফিরে আসছেন দিনের দিন। কেউ নেটে জুড়তে বন্ধু নিয়ে দিন দুয়েক কাটিয়ে আসছেন বহুদিন না দেখা প্রতিবেশী জেলার বাসিন্দা পিসি বা মামার বাড়ি থেকে।

বহরমপুর থেকে রাতের ট্রেনে উঠেছেন সাত জন যুবক। তাদের মধ্যে পাঁচ জনের বাড়ি রেজিনগরে। বাকি দু’জনের বাড়ি দৌলতাবাদে। তাদের মধ্যে সুবীর সরকার বলেন, ” পড়াশোনা শেষ হয়ে গিয়েছে। সারাদিন নেট থাকলে সিনেমা দেখে গান শুনে বলতে পারেন নেট ঘেঁটেই সময় চলে যায়। কিন্তু নেট না থাকায় বাড়িতে কাজকর্ম নেই। মনে হচ্ছে এক একটা দিন এক একটা বছর। হৃদপিন্ড চলছে না। তাই নেট চালাতে বেথুয়াডহরী যাচ্ছি পিসির বাড়ি।”

ওরাই শুধু নয়। ইন্টারনেট বন্ধ না হলে হয়ত জানা যেত না বহরমপুরের কত মানুষ বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করেন বাড়িতে বসে। তাদের একাংশ কেউ ছুটি নিয়েছেন, কেউ ছুটেছেন কলকাতায়। সেখানে হোটেল ভাড়া করে অফিসের কাজকর্ম করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন বলে জানালেন এক বহুজাতিক সংস্থার কর্মী সনজিদা খাতুন।

সাম্প্রদায়িক হিংসার জেরে মুর্শিদাবাদ জুড়ে বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল বিভিন্ন রকম ভিডিও। সেই ভিডিও দেখে ফের নতুন করে উত্তেজিত হয়েছে জনতা। তার সঙ্গে সমান তালে ছড়িয়েছে নানান গুজব। আর তা আটকাতেই প্রশাসন রাশ টেনেছে ইন্টারনেট সংযোগে।

গত রবিবারের পর আজ শুক্রবার। নেটহীন মাঝখানে কেটে গিয়েছে পাঁচ দিন। এটিএম বন্ধ থাকায় নগদ টাকা পেতে ঘাম ছুটছে সাধারণ মানুষজনের। ইউপিআইয়ে আলপিন থেকে এলিফান্ট কেনায় অভ্যস্থ ক্রেতার অসুবিধা হয়েছে কেনাকাটায়। ব্যবসায় পড়েছে টান। একইসঙ্গে জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষার ফর্ম ফিল ইন করা থেকে নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন, বেসরকারি স্কুলের টিউশন ফিজ দেওয়া থেকে পড়ার সামগ্রী কেনা আজ সবকিছু অনলাইনের মাধ্যমে। নেট বন্ধ থাকায় বন্ধ সব।

অনলাইনে মেয়ের জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করতে বহরমপুর থেকে বেথুয়াডহরী ছুটে এসেছেন বিমা কোম্পানীর কর্মী নীতিশ মন্ডল। তিনি বলেন, “কী করব বলুন। আমাদের জেলায় নেট বন্ধ থাকার কথা তো বোর্ড শুনবে না। অগত্যা অফিস করে বেথুয়াডহরী এসেছি।”

খিদিরপুর কলোনি নেতাজী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়দীপ দত্ত বলেন, ” ১৯ তারিখ নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন চুড়ান্ত করার কথা ছিল। অন্য জেলা পারলেও আমরা তা পারলাম না। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চমাধ্যমিক কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে আপলোড করার কথা প্রতিদিন। গতকাল ২১ তারিখ তা শুরু হয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় আমরা বসে আছি। বাংলার শিক্ষা পোর্টালে পড়ুয়াদের থার্ড সামেটিভের ফরমাটিভের নম্বর আপলোড করা যাচ্ছে না ইন্টারনেটের সংযোগ না থাকায়।”

জেলা প্রশাসনিক ভবনের উল্টোদিকের পেট্রল পাম্পের মালিক অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি ” নেট বন্ধ থাকায় গড়ে প্রতিদিন হাজার লিটার করে পেট্রলের বিক্রি কমেছে। যা বিক্রি হয়েছে তা নগদে।” হাসপাতালে, নার্সিংহোমেও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা থেকে অস্ত্রোপচার সবকিছু তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত করা হয়। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড ব্যবহার হলে তা নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে তথ্য আপলোড করতে হয়। সবকিছু থমকে আছে নেটের অভাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights