আইপ্যাকের টিম শুনলো বহরমপুরের অধীর প্রেম

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ লোকসভা নির্বাচন জিতেছে ঠিকই, কিন্তু বহরমপুরের জয় মানসিকভাবে তৃণমূলকে তৃপ্তি দেয়নি। কাঁটার মতো বেঁধে বহরমপুর সহ একাধিক পুরসভার পরাজয়। ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে ফের একবার কাঁটা তুলে ফুল ছড়ানো যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে কোমর বেঁধেছে আইপ্যাক।

দিন দুয়েক আগে বহরমপুর পুরসভার নব্য নির্মিত বৈঠকি হলে চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় সহ কাউন্সিলর, ওয়ার্ড সভাপতিদের নিয়ে লম্বা বৈঠক করেন আইপ্যাকের দুই মহিলা সদস্য। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার সেই বৈঠকে ধরে ধরে কাউন্সিলদের সঙ্গে কথা বলে রোগের কারণ খোঁজার চেষ্টা করেন আইপ্যাকের সদস্যরা। নিজের কানে তাঁরা শুনে আসেন পুরসভায় দলের কাউন্সিলরাই বেসুরো। কারও সঙ্গে কারও মিল নেই মতের, মনেরও। কেউ নিজেদের ঝরা পাতা ভেবে দূরে রেখেছেন, কেউ পরে আছেন হাওয়া বদলের প্রতীক্ষায়।

আর এখানেই মান্যতা পাচ্ছে সদ্য তৃণমূল ত্যাগী কার্তিক সাহার দাবি। ফুল ফেলে হাত ধরে কার্তিক বলেছেন, “আমি সংগঠন করতে চেয়েছিলাম। ওরা কালেক্টর চেয়েছিল।” সেই কথাই ঘুরিয়ে আইপ্যাকের সদস্যরা উপলব্ধি করেছেন, ” বহরমপুরে তৃণমূলের কোনও সংগঠন নেই। এখানে পুরসভা মানেই তৃণমূল আর তৃণমূল মানেই পুরসভা।” সেসব কথার ফাঁকেই এক পুরকর্মী খোঁটা দেন, ” উন্নয়নের হয়েছেটা কী? চৌকো টেবিল গোল হয়েছে কিংবা গোল টেবিল হয়েছে চৌকো।”

তবে একটা ব্যাপারে আইপ্যাকের সদস্যদের সামনে একমত হয়েছেন কাউন্সিলরা। তা হলো বহরমপুরের মানুষের একচেটিয়া কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরীর প্রতি দূর্বলতা। আর তা তৃণমূলের বহরমপুর টিম কোনওভাবেই কাটাতে পারছে না। কোনও ঝাড়ফুঁক, তুকতাক এমনকি যাগযজ্ঞ কাজে আসেনি বলেও শুনেছেন আইপ্যাকের টিম। আর এখানেই চিন্তায় পড়েছে শাসকদল। শাসকদলের কোনও কোনও নেতা আইপ্যাকের দুই মহিলার কাছে দাবি করেছেন, ” ইউসুফ পাঠান ভিনদেশি, তাঁকে ক্ষমতায় আনার থেকে অধীরেই ভরসা রাখা ভাল, এমন কথাও ভেবেছিলেন কাউন্সিলদের অনেকে। তাই হয়ত টান পড়েছে তৃণমূলের ভোটে।”

আর সেই প্রসঙ্গেই কারও কারও কাছে আইপ্যাকের সদস্যরা বিষয়টি বিশদে জানতে চেয়েছেন। তাঁরা বলেন, “অধীর চৌধুরীকে সংবাদ মাধ্যমকে ডাকতে হয় না। বেলা বারোটায় সংবাদ মাধ্যম কংগ্রেস কার্যালয়ে প্রতিদিন অপেক্ষা করে তাঁর একটা বক্তব্য নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের নেতারা সংবাদ মাধ্যমকে ডাকলেও পাত্তা পায় না। কারণ সংবাদ মাধ্যম বুঝে গিয়েছে তৃণমূল মানেই গোষ্ঠী কোন্দল। নেতা ডেকেছে মানেই অন্য কোনও নেতার নামে বিষোদগার করে মিডিয়া হাইপ কুড়োবে। এভাবে আর যাই হোক মানুষের কাজ, সমাজের কাজ হয় না।”

তেমনি আইপ্যাক সম্পর্কেও তেমন টান নেই তৃণমূলের কর্মীই হোক আর কাউন্সিলর হোক, তাদের একটা অংশের। এক তৃণমূল কর্মী বলেন, ” আমরা এত বছর ধরে শুধু আওয়াজ শুনতে পাই। কাজের কাজ কিছু হয় না। উল্টে নিজেদের মধ্যে এরা সন্দেহ ঢুকিয়ে যায়। রেষারেষি বাঁধিয়ে দেয়। ওদের কথায় বুকে হাওয়া ভরে শত্রু বাড়িয়ে লাভ কী? ওরা ভোট পাখি ভোট মিটলেই উড়ে যাবে। আমাদের শহর আমরা বেঁচে থাকলেও এখানে থাকব, মরলেও এখানেই মরব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights