বাম যুবদের আন্দোলন কি হাইজ্যাক করল বিজেপি?

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ পনের দিন পার হয়ে গিয়েছে আরজিকর হাসপাতালের চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের ঘটনা। প্রথমে কলকাতা পুলিশ ও পরে কেন্দ্রের দুঁদে গোঁয়েন্দারা একাধিকবার ঢুঁ মেরেছেন অকুস্থলে। এখনও জোড়া লাগাতে পারেননি সেদিনের ঘটনাক্রম। অথচ প্রতিদিন প্রতিমূহুর্তে নির্যাতিতার বিচার চেয়ে সুর চড়ছে রাজ্যের আনাচে কানাচে।

যদিও ৯ অগস্ট ও তার পরবর্তী সময়ে জনমানসের যে স্বতঃস্ফূর্ত গর্জন টের পেয়েছিল নবান্ন, ধীরে ধীরে সেই আন্দোলনে রাজনীতির রঙ লেগেছে। যত সময় পেরোচ্ছে ততই চড়া হচ্ছে সেই রঙ। আর তাতে প্রথমেই নাম আসছে ভারতীয় জনতা পার্টির। মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের পরে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, নবান্নমুখী ছাত্রদের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে ম্লান হল নির্যাতিতার বিচারের দাবি।

‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ গোষ্ঠী মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল। প্রথম দিকে গোষ্ঠীর নেতারা এই অভিযানকে অরাজনৈতিক বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু পরে তা প্রকাশ হয়ে যায়। এমনকি বিজেপি’র রাজ্য নেতারাও আজকের নবান্ন অভিযানকে শেষতক সমর্থন করেন। দিনশেষে পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো সম্মুখ সমরে থেকে নবান্নমুখী জনতা বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে পাশ মার্কসের মুখ দেখালেন বলে দাবি বিশেষজ্ঞ মহলের।

তাঁদের ব্যাখা, লোকসভা নির্বাচনের পর কাঙ্খিত আসন না পেয়ে গোষ্ঠী কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছিল রাজ্য বিজেপি। একদিকে শুভেন্দু, অন্যদিকে সুকান্ত, আর একদিকে দিলীপ ঘোষ তিন মাথা তিনদিকে হেলে ছিল। যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল রাজ্য বিজেপির শাখায় শাখায়। তাদের সেই মরাগাঙে বান ডাকল যেন আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসক হত্যাকান্ড। তার জেরে বুধবার শুধু ১২ ঘন্টার বনধ ডাকাই নয়। একসঙ্গে জেলাশাসকের অফিস ঘেরাও থেকে চাক্কা জ্যামের মতো বিজেপি আরও ছ’টি কর্মসূচির ডাক দিয়েছে আগামী ছ’দিনে। যা দলের কর্মীদের উৎসাহিত করবে বলেই দাবি একাংশ বিজেপি নেতৃত্বের।

অথচ আরজিকরের ঘটনা নিয়ে প্রথম আওয়াজ তোলে বাম ছাত্র-যুবরা। পরবর্তী সময়ে তাই হাইজ্যাক করার চেষ্টা করেছে বিজেপি, দাবি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। তৃণমূল অবশ্য প্রথম থেকেই বলছে, “সিপিএমই বিজেপিকে আশ্রয় দিচ্ছে তাই বিজেপির এত লম্ফঝম্প।” ৯ অগস্ট নির্যাতিতার দেহ তড়িঘড়ি আরজিকর হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যাওয়ার যখন চেষ্টা করছিল পুলিশ, সেই সময় মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রথম বিচারের দাবিতে শববাহী শকটের পথ আটকায় বাম যুবরা। বিজেপি তখনও পরবর্তী গণ জাগরণের আঁচ পায়নি। পরে পরিস্থিতি বুঝে কিছুটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপে নিজেদের মুখরক্ষার্থে পথে নামে বঙ্গের গেরুয়া শিবির।

এলাকায় এলাকায় দলীয় পতাকাবিহীন আন্দোলনে মিশে সেই সব আন্দোলন হাতিয়ে নেবার চেষ্টা করেন বিজেপির নেতারা। সেই কৌশলই এদিন শুভেন্দুদের পাশ করিয়েছে বলে দাবি, এ রাজ্যের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। অধ্যাপক সুগত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে কলকাতা জুড়ে যে সমস্ত আন্দোলন হচ্ছে তাকে রাম-বামের কর্মসূচি বলে দাবি করেছেন।” যদিও বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার মঙ্গলবার উল্টো কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, “ বামেরা নিজেদের সরিয়ে নিয়ে দাবি করছে এটা রামের আন্দোলন। বামপন্থীরা তৃণমূলের সঙ্গে সেটিং রাজনীতি করছে।” 

তবে বিজেপি কিছুতেই তাঁদের আন্দোলনের মালিকানা নিতে পারবে না বলে দাবি করছেন বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে। তিনি বলেন, “নিজেদের রাজনৈতিক অভিসন্ধী থেকে বিজেপি ছাত্র সমাজের নাম নিয়ে আজকের কর্মসূচি পালন করেছে। তৃণমূল বনাম বিজেপি-র একটা বাইনারি তৈরি করার ব্লুপ্রিন্ট বিজেপি তৈরি করেছিল। আমরা প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ ওরা ছাত্রসমাজের নামকে কালীমালিপ্ত করতে চাইছে। তিলোত্তমার বিচার চাইতে দোষীদের শাস্তির দাবিতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। ওরা সেই আন্দোলনের মালিকানা নিতে চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের আন্দোলনের যে ব্যপ্তি তৈরি হয়েছে তা দিন দিন যেভাবে আরও বিস্তৃত হচ্ছে তাতে ওদের মালিকানা নেওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights