
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রাজ্যের ছ’টি উপনির্বাচনের ফলাফল বেড়িয়েছে শনিবার। সেই ফলাফলে ফের ধরাশায়ী হয়েছে বাম ও কংগ্রেস। ছ’টি আসনের কোথাও কোথাও নোটা (None of the Above)-র থেকেও কম ভোট পেয়েছেন ওই দুই দলের প্রার্থীরা। সেই ফলাফলের আঁচ লাগল বহরমপুরে। জয়ের আনন্দে একাংশ শহরবাসীকে সমাজ মাধ্যমে “পাকা লোক” বলে দেগে দিলেন পুরপ্রধান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়। এদিন উপনির্বাচনের ফলাফল দিয়ে তিনি তাঁর প্রোফাইল পেজে একটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে লেখেন “সবসময় তাত্ত্বিক কথা বলা নেতাদের দূরাবস্থার সংখ্যাগুলো দেওয়া হলো। বহরমপুরের পাকা লোকদের জন্য তথ্যটা রইলো।”
এখানে ‘পাকা’ অর্থে কাদের বুঝিয়েছেন নাড়ুগোপাল? রাজনীতির ময়দানে সাধারণত বামফ্রন্টের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের মানুষজন তাত্ত্বিক বলে ডাকেন। কেউ তা ব্যবহার করেন কটাক্ষের সুরে, কেউ আবার জ্ঞানের দিক থেকেও তাত্ত্বিক বলে তাঁদের এগিয়ে রাখেন। তাহলে কী নাড়ুগোপাল শহরের বাম সমর্থকদের সমালোচনা করলেন?

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আরজিকর কান্ডে ঘাসফুল শিবিরের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে বাম যুব নেতারা, এমনটা দাবি শাসকের অন্দরে। স্বাভাবিকভাবে রুদ্ধশ্বাস উপনির্বাচনে জিতে শাসকদলের রাজ্যের নেতারা বামফ্রন্টের সমালোচনায় মুখর। তাঁদের সুরে শনিবার সন্ধ্যায় নাড়ুগোপাল সুর বেঁধেছেন কি না তা একবাক্যে বলতে চাননি তাঁর দলেরই সমর্থকরা।
নাড়ুগোপালের অবশ্য যুক্তি অন্য। তিনি বলছেন, “একমাত্র বহরমপুরের মানুষই সবসময় সরকার বিরোধী অবস্থান নেয় নির্বাচনে। আর সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন সরকারের। এই নীতি নতুন নয়, ১৯৮২ সাল থেকে চলে আসছে।” তাঁর আরও দাবি, ” অন্ধের মতো শহরবাসী বরাবর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আসছেন। তাই সবসময়ের জন্য নেতিবাচক মানসিকতা বা চলতি কথায় পাকামো যেকোনও এলাকার উন্নয়নের মাপকাঠির ক্ষেত্রে প্রতিকূল “
তবে তাঁর এই দাবি মানতে চাননি সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সন্দীপন দাস। নাড়ুগোপালের বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগে তিনি বলেন, ” প্রহসনের নির্বাচনের ফলাফল দেখে তৃণমূল যেন না ভাবে তাদের আকাশ পরিস্কার।” কারণ হিসেবে তাঁর যুক্তি, ” কয়লা চুরি, চাল চুরি, দুর্নীতি, ধর্ষণ, তোলাবাজি, চাকরি চুরি, মা -বোনেদের সম্মান লুট, মানুষ কোনওটিই ভোলেনি। মুর্শিদাবাদের বুকে কাজ না পেয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের হাহাকার মানুষ মনে রেখেছে। বিজেপির সঙ্গে শাসকদলের অশুভ আতাঁতের বিরুদ্ধে মানুষ প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই প্রস্তুতি রাজ্যের তৃণমূলের পাশাপাশি ভোট লুঠ করে পুরসভা দখল করা বহরমপুরের তৃণমূলও খুব শীঘ্রই বুঝতে পারবে।”
বাংলায় দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনকালে একটা বড় সময় বহরমপুর পুরসভা শাসন করেছে কংগ্রেস। সেই জমানায় রাজ্যের মধ্যে কাজের নিরিখে সেরার তকমা কুড়িয়েছিল বহরমপুর। সেই উদাহরণ তুলে বর্তমান পুরপ্রধানের এ হেন দাবি শহরবাসীকে প্রকারান্তরে অপমান করা বলে মনে করেন জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস।
এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, ” যে শহরের নাগরিক তাঁকে বর্জন করেছে, যিনি শহরের মত বিসর্জন দিয়ে পেশিশক্তি আর পুলিশ শক্তিকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করেছেন, যিনি নিজের ওয়ার্ডেই জিততে পারেন না তার মুখে রাজনীতির সোপান মানায় না। এই জেলায় তৃণমূল পরিচালিত আরও পুরবোর্ড আছে। সেখানকার পুরপ্রধানরা দিনের বেলায় অফিস করেন। আর বহরমপুরের পুরপ্রধান রাতে অফিস করেন। আমরা জানি রাতের বেলায় ঘুরে বেড়ায় শুধু লক্ষ্মীর বাহন। যাঁর মতের গুরুত্ব পাড়ার লোকে দেয় কি না সন্দেহ, তাঁর এহেন রাজনৈতিক বিশ্লেষণ না করাই ভাল।”
প্রসঙ্গত, ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে লোকসভা আসন জিতলেও বহরমপুর পুরসভার মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন। যা কার্যত ভাবিয়েছে রাজ্য তৃণমূলকেও। রাজ্যের অন্য এলাকার লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দলে ও প্রশাসনে রদবদলের মতো সিদ্ধান্তও নিতে চলেছেন শাসকদলের শীর্ষ নেতারা। নাগাড়ে শহরবাসীর মতামত পক্ষে টানতে চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূলের বিভিন্ন সূত্র। এমন সময় বহরমপুরের পুরপ্রধানের শহরবাসীর সমালোচনা সেই বিতর্কে ঘি ঢাললো বলেই মনে করছেন অনেকে।