বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ কৃষ্ণনগরের সভা থেকে মুর্শিদাবাদের বহু প্রতীক্ষিত নশিপুর রেলসেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর এই সেতু উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সহজ হল মধ্যবঙ্গের যোগাযোগ। একদিকে যেমন পর্যটকরা আশায় বুক বাঁধছেন তেমনি ব্যবসায়ীরাও স্বপ্ন দেখছেন এই রেলসেতুকে ঘিরে।
তবে এই রেল সেতু দিয়ে রেলের চাকা গড়ানোর কৃতিত্ব কার তাই নিয়ে দিন কতক ধরে উত্তাল রাজনৈতিক শিবির থেকে সমাজ মাধ্যম (Social Media) সর্বত্র। সেই তর্কে বাদ নেই সমাজ মাধ্যমের সাধারণ পর্যটকও।
তথ্য বলছে, ২০০৪ সালে এই রেলসেতু তৈরির শিলান্যাস করেছিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। ৪৬কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দও হয়েছিল। কথা ছিল ২০১০ সালে এই রেলসেতুর কাজ সম্পন্ন হবে। কাজও শুরু হয়েছিল। ৭৫৮ মিটার দীর্ঘ ওই রেল সেতু নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেও জমি জটে থমকে গিয়েছিল রেলসেতুর ভবিষ্যৎ। বাকি থাকা এক শতাংশ কাজ মিটতে লেগে গেল দীর্ঘ চোদ্দ বছর।
আজিমগঞ্জের দিয়ার মাহিনগর ও চর মহিমাপুর মৌজায় এই সেতু নির্মাণ হয়েছে। সেখানকার ১৩০ জন জমির মালিক এই সেতু নির্মাণের জন্য জমি দিয়েছেন। ২০০৫ সালের আগে জমির দাম অনুযায়ী তার বিনিময়ে জমিদাতারা টাকাও পেয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের একজনকে অন্তঃত চাকরি দেওয়ার দাবি জানিয়ে বেঁকে বসেন জমিদাতা অজিত মন্ডলরা। তাদের দাবি ছিল নিদেন পক্ষে জমিদাতাদের পরিবারের একজনকে চাকরি দিক রাজ্য।
বছর দুয়েক আগে ২০২২ সালে এই সেতুর বকেয়া কাজ নিয়ে উদ্যোগী হন পিএসি চেয়ারম্যান অধীর চৌধুরী। একাধিকবার পূর্ব রেলের ডিআরএমদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কথা বলেছেন জমি দাতাদের সঙ্গেও। কংগ্রেসের দাবি, দুপক্ষের কথা নিয়ে অধীর বহুবার কথা বলেছেন রেলমন্ত্রীর সঙ্গেও। অবশেষে জট কেটে আজ রেল গড়িয়েছে নশীপুর রেল সেতু দিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেস এর জন্য কৃতিত্ব দিয়েছে অধীরকে।
তাদের দাবি, সেতু নির্মাণের জট যখন কেটে গিয়ে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে রেল, তখন একে একে নির্মীয়মাণ রেলসেতুর উপর ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছে তৃণমূল, বিজেপি। সপক্ষে প্রমাণ দিতে লালুপ্রসাদ যাদব থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অধীরের ছবি সহ ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে পোষ্ট করা হয়েছে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে।অধীর অবশ্য রেলসেতু প্রসঙ্গে বিরোধী শিবিরের দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। রেলমন্ত্রীকে লেখা চিঠি দেখিয়ে ফেসবুকে সরব হয়েছেন বিজেপি’র বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্র। তিনি দাবি করেছেন, ” আমি কোনও কৃতিত্ব দাবি করছি না। … বিভিন্ন জায়গায় চিঠি লিখেছিলাম আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম।” তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খান ও দাবি করেছেন তিনিও রেলকে চিঠি দিয়েছেন, জমি দাতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আজ নশিপুর রেল সেতু দিয়ে রেলের চাকা গড়িয়েছে।
এসবের মাঝে প্রয়াত সাংবাদিক শান্তনু ঠাকুরের পুত্র পুষ্পক ঠাকুর ফেসবুকে একাধিক পেপার কাটিং পোস্ট করে জানিয়েছেন “নশিপুর রেল ব্রিজের আন্দোলনের পুরোধা যারা ছিলেন তারা আজ কোথায়, কেউ তাদের মনে রেখেছেন?” সংবাদ হাজারদুয়ারিকে ফোনে তিনি বলেন, “১৯৯৩-১৯৯৬ সাল নাগাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই রেলসেতু চালু করবার দাবি নিয়ে দরবার শুরু হয়েছিল। সেগুলিই বাবার লেখা গণকন্ঠের মতো সংবাদপত্রে ধরা আছে।” তিনি আরও বলেন, ” পত্রিকার সম্পাদক প্রাণরঞ্জন চৌধুরী, প্রতিভারঞ্জন মৈত্ররা জানি এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এ.আর.খান অনেক পরে এসে এই সেতু তৈরির জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন। সেতু চালু হওয়ার পেছনে এদের কৃতিত্ব ভোলার নয়।”