জুতোয় সন্দীপ ঘোষের প্রতিকৃতি, প্রতিবাদের নতুন ছবি দেখল বহরমপুর

Social Share

সংবাদ প্রতিনিধি, বহরমপুরঃ চিকিৎসক হত্যার মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনায় উত্তপ্ত বাংলা। ক্ষোভের আগুন দাবানল হয়ে ছড়িয়ে না পড়লেও এখনও তা ধিকিধিকি জ্বলছে মানুষের মনে। সর্বত্র এই জঘন্য ও নারকীয় ঘটনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে হচ্ছে প্রতিবাদ। সেই প্রতিবাদের ধরনও আলাদা, আলাদা। কিন্তু বহরমপুরে শনিবার সন্ধ্যায় সেই প্রতিবাদের ভাষা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। যা প্রতিবাদীদের রুচিবোধের প্রশ্নকেই জোরাল করেছে।

ওইদিন কথায়, গানে, কবিতায়, নাটকে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল জাগরিত সংস্কৃতি সংহতি মঞ্চ। সেখানেই উপস্থিত শ্রোতা দর্শকদের পায়ের জুতোতে প্রাক্তন চিকিৎসক ও আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ছবির স্টিকার আটকে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। সাদা কালো সেই ছবিতে লাল কালিতে লেখা “ছিঃ”। আবেদনে সাড়া দেন উপস্থিত অনেকেই। আর তাই নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

আরজিকর হাসপাতালের চিকিৎসক হত্যাকান্ডের এখনও তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। পুরো ঘটনাটি পর্যবেক্ষণে রয়েছে শীর্ষ আদালতের। পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই সন্দীপকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও দোষী সব্যস্ত না হওয়ায় সে অভিযুক্ত হিসেবেই গণ্য। এই অবস্থায় একজন অভিযুক্তের ছবি পায়ের জুতোয় কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তাই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। তার সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে বহরমপুরের মতো সাংস্কৃতিক শহরের রুচির প্রশ্নও।

মুর্শিদাবাদ জেলার দুই সিনিয়র সাংবাদিক এই ব্যপারে দুই মত। সাংবাদিক প্রাণময় ব্রহ্মচারীর যুক্তি, ” একজন চিকিৎসককে মানুষ ভগবানের মতো শ্রদ্ধা করে। সেই চিকিৎসক যখন শয়তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ও মানুষের ক্ষতি করেন তখন তাঁর স্থান পায়েই হওয়া উচিত। সন্দীপ ঘোষ আরজিকর হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত। একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাথা। তিনি চিকিৎসক হিসেবে তাঁর যোগ্যতা হারিয়েছেন।” আর এক সাংবাদিক প্রদীপ দে স্পষ্টতই এক্ষেত্রে প্রতিবাদীদের রুচির প্রশ্নকেই বড় করেছেন। তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে কোনও প্রতিবাদের একটি রুচি থাকা প্রয়োজন। এই ধরনের প্রতিবাদ আমার ভাল লাগেনি।”

উপস্থিত অনেকে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন সিবিআই হেফাজত থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে সন্দীপকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়ে জনতা। সেই জনতাই ক্ষোভ থেকে তাঁর গালে সপাটে থাপ্পড়ও মারেন। সেটাই বা কোন ধরনের প্রতিবাদের ভাষা? এর সঙ্গে তুলনা চলে আসছে শাসক দল তথা সরকারের একাধিক জনবিরোধী নীতির। তুলনা টানা হচ্ছে শাসকদলের নেতা নেত্রীদের অপরাধের তালিকা ধরেও। শনিবার সন্ধ্যার এই প্রতিবাদ সভার আয়োজনের নেপথ্যে ছিল গুটিকয়েক তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়ে। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সন্দীপের মুখ ছাপানো স্টিকার পায়ে লাগানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। তা নিয়েও আয়োজকদের মধ্যে দ্বিধা ছিল স্পষ্ট, এমন তথ্যই উঠে আসছে।

সোনালী গুপ্ত বহরমপুরে “রাত দখল” কর্মসূচির অন্যতম কার্যকর্তা। শনিবারের ওই সভায় তিনিও উপস্থিত ছিলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, “বিষয়টিকে আমি প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেই দেখছি।” গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কমিটির মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক, মানবাধিকার কর্মী মিলন মালাকারও প্রতিবাদের এই ভাষার তীব্র বিরোধীতা করেছেন। তিনি ওইদিনের অনুষ্ঠানে শুরু থেকেই উপস্থিত ছিলেন।

মিলন বলেন, “এটা প্রমাণ করে আমি নিজেই সন্দীপ ঘোষকে দোষী বলে বিচার করে দিলাম। তাই তার পায়ের তলায় থাকা উচিত। আমি তবে বিচার চাইব কেন? একজন অভিযুক্ত মানেই অপরাধী নয়। তার মানে এই নয় যাকে অভিযুক্ত বলে ধরেছি তাঁকে ফাঁসি দিয়ে দেব। এটা মনে রাখা দরকার।”

আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে মৃণ্ময় রায়ও বলেন, “ব্যক্তিগতস্তরে এই নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ সন্দীপ ঘোষ একজন অভিযুক্ত, এখনও অপরাধী ঘোষিত নন। বিষয়টি এখনও বিচারাধীন।”

আরও পড়ুনঃ শুভঙ্করের সামনে লক্ষ্য ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights