হার মানাচ্ছে হীরক রাজাকেও
সংবাদ প্রতিনিধি, মুর্শিদাবাদঃ জুনের তিন তারিখের বদলে আরও একসপ্তাহ গরমের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এই ছুটি শুধুমাত্র পড়ুয়াদের জন্য। শিক্ষা দফতরের সোমবারের নয়া নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা স্কুলে আসবেন জুনের তিন তারিখ থেকে। আর পড়ুয়ারা আসবে দশ তারিখ থেকে।

দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় সময়ে সিলেবাস শেষ হবে না বলে প্রথম থেকেই চিন্তিত একাংশ শিক্ষক । তাঁদের দাবি, এরফলে পিছিয়ে পড়বে পড়ুয়ারা। আবার নতুন সিলেবাসের একাদশের পড়ুয়াদের সিমেস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদ। এখনও পর্যন্ত বাজারে নতুন সিলেবাসের বই আসেনি। সিলেবাসের সঙ্গে পড়ুয়াদের পরিচয়ই হয়নি। দেরিতে স্কুল খুললে সিলেবাস ও পরীক্ষা পদ্ধতি বুঝতে বুঝতে তাদের পরীক্ষার সময় চলে আসবে। তার জের চলবে দ্বাদশের চুড়ান্ত পরীক্ষা পর্যন্ত। অপেক্ষাকৃত দূর্বল পড়ুয়াদের ফল ভুগতে হবে বাকি জীবন। তাই সিদ্ধান্ত পূনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে চিঠি দিয়েছে নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি।
একদিকে ১৮ তম লোকসভা নির্বাচনের কুরুক্ষেত্র, অন্যদিকে তীব্র দহন। এক ঢিলে এই দুইয়ের মোকাবিলা করতে ৪১ দিনের গ্রীষ্মবকাশ ঘোষণা করে সরকার। চলতি বছর এপ্রিল মাসের ২২ তারিখ থেকে ১ লা জুন পর্যন্ত গরমের ছুটি থাকবে বলা হয়েছিল। পরের দিন দু তারিখ রবিবার হওয়ায় তিন তারিখ থেকে সরকারি সেই নির্দেশ মতই স্কুল খুলছে। কিন্তু সোমবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নয়া নির্দেশেই গোল বেঁধেছে শিক্ষক মহলে।

২৭ তারিখের ওই নির্দেশে শুধুমাত্র শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের স্কুল আসার কথা বলা হয়েছে। স্কুল আসতে বারণ করা হয়েছে পড়ুয়াদের। যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে লোকসভা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে।নির্বাচন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় বাহিনীর থাকা-খাওয়ার জায়গা ছাড়াও নির্বাচন সংক্রান্ত নানান কাজে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ বাড়িকে কাজে লাগানো হয়েছিল।
শিক্ষকদের দাবি,পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে যাওয়ার পর বেহাল হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৌচালয়। অনেকাংশে ভেঙে পড়ে থাকে পড়ুয়াদের বসার বেঞ্চ। খারাপ হয়ে যায় সুইচ বোর্ড থেকে লাইট, ফ্যানও। ফলে স্কুল খোলার পর অসুবিধায় পড়তে হয় কতৃপক্ষকে। অনেকসময় স্কুল ফান্ড থেকে কেউ কেউ তা সারিয়ে নিলেও অনেক স্কুল সরকারী সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফলে কোথাও কোথাও দীর্ঘস্থায়ী হয় পড়ুয়াদের অসুবিধা।

এই অসুবিধা দূর করতেই স্কুল কতৃপক্ষকে দিন সাতেক সময় দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে স্কুল প্রধানরা জেলাশাসকের মাধ্যমে পরিকাঠামোগত সমস্যা মিটিয়ে নেবেন। ১০ জুন থেকে পড়ুয়ারা স্কুলমুখী হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে পর্ষদ। আর তাতেই আপত্তি তুলেছেন এবিটিএ। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে পর্ষদকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সুকুমার পাইন সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অবিবেচনাপ্রসূত ও অবাস্তব বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “ছাত্র-ছাত্রীর পঠনপাঠন ব্যতিরেকে শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের উপস্থিতি অযৌক্তিক,” সংগঠনের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরকারের এই সিদ্ধান্ত হার মানাচ্ছে হীরক রাজাকেও।”