সংবাদ প্রতিনিধি, বহরমপুরঃ আরজিকর হাসপাতালের পড়ুয়া চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুন কান্ডে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ সংগঠিত হচ্ছে। রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক নানানভাবে সংগঠিত এই প্রতিবাদে পা বাড়িয়েছে নাগরিক সমাজও। এখনও যাঁরা সেই প্রতিবাদে শামিল হয়নি তাদের বার্তা দিতে ‘রাতে জাগো, দিনে জাগাও’ কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন বহরমপুরের একদল তরুণ-তরুণী। রাতভোর তাঁরা টেক্সটাইল কলেজের রাস্তা জুড়ে রেখায় রঙে ফুটিয়ে তুললেন প্রতিবাদের নানান ছবি। রঙ তুলি হাতে রাত জেগে তাঁরা লিখলেন ” দিন আমার,রাত আমার,রাস্তা আমার।” সেই সঙ্গে আরজিকর কান্ডের বিচার চাইতেও ভুল করলেন না তাঁরা।

তাঁদেরই একজন আর্য সেনগুপ্ত জানালেন, “মানুষ এখনও প্রতিবাদ করতে ভয় পাচ্ছেন। এখনও অনেকে রাজ্যে ঘটে যাওয়া এই নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনায় শুধুই যেন ওয়াচ টাওয়ার। তাদের ধাক্কা দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ। আমরা রাত জেগে যে প্রতিবাদ করলাম, সকালে এই রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দেখতে পাবেন সেই প্রতিবাদের চিহ্ন। আর তা দেখে যদি তাদের বিবেক জাগ্রত হয় তাহলে এই প্রতিবাদ সার্থক।”

‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আরজিকর কান্ডের প্রতিবাদ চাক্ষুষ করেছিল রাজ্য। তারপর থেকেই সমাজের স্তরে স্তরে প্রতিবাদ সংগঠিত হচ্ছে সর্বত্র। বহরমপুরও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। বামফ্রন্ট জমানার শেষবেলায় নন্দীগ্রাম কাণ্ডে এভাবেই প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল বহরমপুর। সেবারও গান গেয়ে, ছবি এঁকে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন বহরমপুরের কবি, শিল্পীরা।

শনিবার ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে আরজিকর হত্যাকান্ডের প্রতিবাদেও শামিল হয়েছিলেন শহরের বিশিষ্টজনেরা। চিত্রশিল্পী কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত, সৌমেন্দ্রনাথ মন্ডল, সুদীপ্ত হালদার, মহম্মদ মিজানুর খান, কবি সৈয়দ খালেদ নৌমান, সমীরণ ঘোষ, চিকিৎসক আলী হাসানদের সঙ্গে হাজির ছিলেন বেশ কিছু তরুণ-তরুণী।

গান গেয়ে, ছবি এঁকে, কেউ কবিতা পাঠ করে, কেউ আবৃত্তি করে আরজিকর হাসপাতালের নারকীয় হত্যাকান্ডের প্রতিবাদের পাশাপাশি বিচারের দাবিতে এদিন সরব হন তাঁরা। কৃষ্ণজিৎ বলেন, “ছবি এঁকে কোনও অপরাধ আটকানো যায় না। প্রতিকার করা যায় না অন্যায়ের। ছবি এঁকে শুধু এইটা বুঝিয়ে দেওয়া যায়, কখন আমাদের ডুকরে উঠতে হবে, কিংবা কিভাবে কষিয়ে মারতে হবে থাপ্পড়।”

ওইদিনই বহরমপুর ব্লক ও শহর কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও একটি প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেই মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দাবি করেন, ” এটা শুধুমাত্র একটি ধর্ষণ বা খুন নয়। এর পেছনে অনেক বড় রহস্য লুকিয়ে আছে। এই তদন্তের আরও গভীরতা জানা দরকার। কারা করল, কেন করল, কীভাবে হল না জানতে পারি তাহলে আমাদের সকলের দাবি পূরণ হতে পারে না।”