বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ গভীর নিম্নচাপ সরে গিয়েছে। মঙ্গলবার রোদও উঠেছিল। ওইদিনই ছিল বিশ্বকর্মা পুজো। কিন্তু আরজিকর কান্ডের আবহে সেই পুজোতে উৎসাহই দেখালেন না বহরমপুরের মানুষ। যদিও নিয়ম মেনে পুজো হয়েছে। কিন্তু উৎসব হয়নি। বহরমপুর শহরে এই পুজোতে যে মানুষজন ঘরের বাইরে বেড়িয়ে দারুণ উৎসাহে পুজোয় অংশ গ্রহণ করেন তেমন নয়। তবে দুর্গা পুজোর আগে উৎসবের মুখরা হিসেবে দেখা হয় বিশ্বকর্মাকে। চারদিকে থাকে শারোদৎসবের আবহ।
আরজিকর হাসপাতালে শিক্ষানবীশ তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণ কান্ডের প্রতিবাদে এবার মুখর সেই জনতাই। তাঁদেরই একাংশ দুর্গোৎসবে ‘না’ বলেছেন। অন্য অংশ অবশ্য পুজোর ক’দিন উৎসবের পক্ষে। দিন কয়েক আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে উৎসবে শামিল হতে ডাক দিয়েছেন। যা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি রাজ্যে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে বহরমপুরের প্রায় সব পুজো কমিটিই অনুদান নিচ্ছেন। চলতি বছর ক্লাবগুলিকে ৮৫ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সরকার। আগামী বছর তা আরও পনের হাজার বেড়ে দাঁড়াবে, এক লক্ষ টাকা। সেই দিকে তাকিয়েও অনেকে এবার অনুদান ফেরাতে চাইছেন না বলে দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলায় যত পুজো হচ্ছে তার মধ্যে দু’হাজার ৩০২টি পুজো কমিটিকে অনুদান দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) মাজিদ ইকবাল খান। এখনও পর্যন্ত কোনও পুজো কমিটিই অনুদান না নেওয়ার কথা জানায়নি বলেও জানান ওই আধিকারিক। বহরমপুর থানা এলাকায় চলতি বছর ৫৭০টি পুজো হচ্ছে। তারমধ্যে ৫২০টি পুজো কমিটি অনুদান পাবে। সব মিলিয়ে রাজ্যে আরজিকর কান্ডের প্রভাবে পুজো অনুদান না নেওয়ার হিড়িক পড়েছে বলে সমাজমাধ্যমে দাবি করা হলেও মুর্শিদাবাদে তার কোনও প্রভাব পড়ছে না বলে দাবি করছেন শাসক দলের একাধিক নেতাও।
বহরমপুর মধুপুর বাবুলবোনা সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির অন্যতম মুখ মিঠু জৈন বলেন, “আমরা অনুদান নিয়েই পুজো করছি।” মিঠু আগে সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ইদানিং দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যদিও তারসঙ্গে পুজোর কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি তাঁর। আবার কংগ্রেসের শহর সভাপতি অরিন্দম দাস ওরফে পাপ্পুর পুজো বলে পরিচিত খাগড়া হরিবাবুর ঢালুর কাছে বাবুপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজো। অরিন্দম অবশ্য বলেন, “এখনও কমিটির সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তবে অনুদান ফেরত দেওয়ার সম্ভাবনা নেই এক্ষেত্রেও, দাবি সূত্রের। আবার স্বর্ণময়ী অভ্যূদয় পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য কানাই মিশ্রও বলেন তাঁরা পুজো অনুদান ফেরত দিচ্ছেন না।
বহরমপুরের অধিকাংশ পুজো কমিটির মাথায় তৃণমূল। এক এক জায়গায় একএক জন তৃণমূলের নেতা। সরাসরি নামে না থাকলেও দাবি, সব কটি পুজোর মাথায় পুর চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়। সেই কারণেই কী ইচ্ছে থাকা সত্বেও পুজো অনুদান ফেরাতে সাহস দেখাচ্ছেন না কেউ? নাড়ুগোপাল বলেন, ” না তা নয়। ব্যাপারটা সরলিকরণ হয়ে গেল। এই শহরে চাঁদা ওঠে কম। সেক্ষেত্রে সরকারি অনুদানটুকু ওদের সাহায্য করবে। মানুষকে সুস্থভাবে ঠাকুর দেখা থেকে আনুষঙ্গীক সব ব্যবস্থাই পুজো কমিটিকে করতে হয়। ফলে সেই খরচ জোগানো কষ্টকর হয়। তাই কেউ আর অনুদান ফেরায়নি বলেই আমার মত।” তাঁর দাবি, বহরমপুরে যা পুজো হয় তাঁর গোটা কয়েক তিনি উদ্বোধন করেন। খাতায় কলমে তিনি দুটো পুজোর প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুনঃ মীনাক্ষীর গায়ে হাত দেওয়া আইপিএস অভিষেক গেলেন ইএফআরে