সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সমাজমাধ্যমে নিজেদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল পিকচার সরিয়ে সহকর্মীর রক্ত মাখা মুখের ছবি শেয়ার করে গত ৪৮ ঘন্টা ধরে আলোচনায় থাকল বঙ্গ পুলিশ। শুধু রাজ্যের বিরোধী দলনেতা নয়, পুলিশের শ্লোগানের পাল্টা শ্লোগান তৈরি হল, রুদ্রনীল লিখলেন গান, রঞ্জিত মল্লিকের মতো বর্ষীয়ান অভিনেতা ইঙ্গীতপূর্ণভাবে শেয়ার করলেন তাঁর অভিনীত শত্রু সিনেমার চার মিনিটের একটি ক্লিপিংস। সব মিলিয়ে ভাল পুলিশ আর মন্দ পুলিশ নিয়ে কথার পৃষ্ঠে কথার বুনোনি চলল নেট দুনিয়ায়।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এরজন্য এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকারের দিকে আঙুল তুলে বললেন, তাঁর নির্দেশই নাকি মানতে বাধ্য হয়েছে নিচু তলার পুলিশ।সকালে নিজের ফেসবুক পেজে পুলিশের পোষ্ট করা নানান শ্লোগান, ছবি শেয়ার করে লিখেছিলেন, সিঙ্গুর খ্যাত সুপ্রতীম সরকার,পুলিশ অফিসারদের অনিচ্ছাসত্ত্বেও, তাদের দিয়ে জোর পূর্বক এই পোস্ট করাচ্ছেন, আবার ৪৮ ঘন্টা স্যোশাল মিডিয়ায় এই পোস্ট রাখার নিদান ও দিচ্ছেন। কার্বাইড দিয়ে জোর পূর্বক সবকিছু পাকানো যায়। কিন্তু আর.জি.কর ভোলা যাবে না।”
বিকেলে বিধানসভার বাইরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বললেন, পুলিশের এই কর্মকাণ্ডে মুখ পুড়েছে পুলিশ কর্মীদেরই। তিনি বলেন, পুলিশের শীর্ষ স্তরের একটা অংশ বিশেষ করে আইপিএসরা মুখ্যমন্ত্রীকে তোষামোদ করে স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন। আর এই ধরনের নির্দেশ দিচ্ছেন নিচু তলার কর্মীদের। আর বামফ্রন্টের ব্লু আইড বয় সুপ্রতীম সরকার এই বিষয়টায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে দাবি করে বললেন, “এরফলে মুখ পুড়েছে পুলিশের নিচুতলার কর্মীদেরই।”
আর তাই পুলিশকে হাতে রাখতে সরকার আরজিকর কাণ্ডের পর একদিকে যেমন সিভিক ভলান্টিয়ারদের পুজোর বোনাস ছ’হাজার টাকা করেছে তেমনি অবসরের সময় এককালীন ভাতা বৃদ্ধি করেছেন ৪০ শতাংশ। একলপ্তে তিন লক্ষ থেকে বেড়ে ছ’লক্ষ হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের অবসরকালীন ভাতা, অভিযোগ শুভেন্দুর। তেমনি একসঙ্গে তিন শতাধিক সাব-ইন্সপেক্টরকে ইন্সপেক্টর পদে উন্নিতকরাও সেই কৌশলেরই অঙ্গ বলে দাবি করেন শুভেন্দু।
এদিন পুলিশকে ব্যঙ্গ করে গান বেঁধেছেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষও। তিনি লিখেছেন-“ও পুলিশ তুমি দেখো চেয়ে,তোমায় দেখছে তোমার মেয়ে!!”৫ মিনিট চুপচাপ শুনুন…সত্যিটা গায়ে লাগলে মিথ্যে মামলায় জেলে পুরুন” তিনি গেয়েছেন-পুলিশ তুমি দিচ্ছ সাফাই নিজের মেয়েকে নিয়ে/ আগে উত্তর দাও কার চাপেতে লিখছো এসব ফেসবুকেতে গিয়ে।”
কাকতালীয়ভাবে শুক্রবার নিজের পেজে নিজেরই অভিনীত ১৯৮৪ সালের শত্রু সিনেমার চার মিনিটের একটি ক্লিপিংস শেয়ার করেছেন রঞ্জিত মল্লিক। তিনি লিখেছেন-আজকে সে সত্যি এক সৎ পুলিশের মতন কাজ করল। সেই ক্লিপিংসে দেখা যাচ্ছে অনুপ কুমার অভিনীত চরিত্র বলছে-“আপনার মতো অফিসার যদি সব থানায় থাকত তাহলে ঘুষখোর অফিসারদের সব চরিত্র পাল্টে যেত।

ওই ক্লিপিংসেই শোনা যাচ্ছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ডায়ালগ। যখন রঞ্জিত মল্লিক শিশু ছোটুর কাছে জানতে চাইছেন “বল তুই বড় হয়ে কী হবি? ডাক্তার ইঞ্জিনিয়র কী হবি বল?” সময় নষ্ট না করে ছোটু উত্তর দেয় ” মা বলেছে আমি বড় হয়ে তোমার মতো ভাল পুলিশ হবো।” গত দু-দিন ধরে সমাজমাধ্যমে পুলিশ ও সমাজের মধ্যে যে বিভেদ রেখা তৈরি হয়েছে তার এখানেই যবনিকা পতন হোক বোধহয় চাইছেন বর্ষিয়ান এই অভিনেতাও।
আরও পড়ুনঃ নিজের ছবি সরিয়ে সহকর্মীর রক্তাক্ত মুখের ছবি দিয়ে প্রতিবাদ পুলিশের