নিজের ছবি সরিয়ে সহকর্মীর রক্তাক্ত মুখের ছবি দিয়ে প্রতিবাদ পুলিশের

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্র: রাষ্ট্রকে বাঁচাতে পুলিশের আমদানি। পুলিশের রাষ্ট্রের টেনে দেওয়া গন্ডীর বাইরে যাওয়া মানা। রাষ্ট্রের আইনের পাহারাদার পুলিশ। শৃঙ্খলাপরায়ণ সেই পুলিশের চোখের জল ফেলা তো দূরঅস্ত মনখারাপও মানা। কারণ বাহিনী আবেগ তাড়িত হলে আইনের বন্ধন যাবে টুটে। সমাজ হবে অরক্ষিত। তাই বাহিনীর প্রতি জোড়া চোখ যেন অতন্দ্র প্রহরী। তবুও অস্বীকার করবার জায়গা নেই সেও রক্ত মাংসের মানুষ।

পশ্চিমবঙ্গের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে আহত সেই পুলিশ। প্রতিবাদের স্বর আজ স্পষ্ট। মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানে নেমে যে ‘ছাত্র’ ও পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ বেঁধেছিল মহানগরে, সেখানে দু পক্ষই আহত। এক পুলিশ কর্মীর চোখ আজ যাই যাই অবস্থায় দাঁড়িয়ে। রণক্ষেত্রে বিপক্ষের ছোড়া ইঁটের আঘাতে অঝরে রক্ত ঝরছে তার চোখ দিয়ে। বাঁ হাত দিয়ে সেই চোখ ধরে এগিয়ে আসছেন কলকাতা পুলিশের বছর ৩৭এর সার্জেন্ট দেবাশিস চক্রবর্তী। সেই ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল।

নিঃশব্দ প্রতিবাদ (?) হিসেবে বৃহস্পতিবার নিজেদের ছবি সরিয়ে সমাজমাধ্যমে আহত, রক্তাক্ত সেই সহকর্মীর মুখ বসিয়ে দিল বঙ্গ পুলিশ। কেউ সেই ছবি দিয়ে তৈরি করলেন রিলস। যা কার্যত নজিরবিহীন। সূত্রের দাবি, পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের প্রচ্ছন্ন নির্দেশ না থাকলে শৃঙ্খলাপরায়ণ বাহিনী এ কাজ করতে পারত না। দিন দুয়েক ধরে একাধিক পুলিশ কর্মীর ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটলে নজরে পড়ছে কেমন বিভেদের চিহ্ন। পছন্দ না হলে সটান বন্ধুত্ব খারিজের হুঁশিয়ারি। এ কোন পুলিশ? সমাজমাধ্যমে বিচরণ করছে পুলিশের পাল্টা শ্লোগান। “পুলিশের মেয়ের চিন্তা ছাড়/ সে লড়াই করেই হচ্ছে বড়ো।” তখন থামতে হয়। তবে পুলিশ কি পক্ষ নিচ্ছে।

পুলিশ রাষ্ট্রযন্ত্র। শাসক তাঁকে নিজের মতো নাড়াচাড়া করে। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিদ্র করতে আইনশৃঙ্খলার নামে থানা তৈরি করেছে রাষ্ট্র। অথচ রাজ্যের প্রতিটি থানায় ঢুঁ মারলে দেখা যায়, সেখানে ঢাল নেই, তলোয়ার নেই পুলিশ সেখানে নিধিরাম সর্দার। যার যখন ইচ্ছে হচ্ছে সরকারি সম্পত্তির মতো এসে ব্যবহার করে চলে যাচ্ছে। কখনও এমন পরিস্থিতি আসছে যখন প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ আশ্রয় নিচ্ছে টেবিলের তলায় অথবা আপোষ করে পাপোষের মর্যাদায় অতিবাহিত করতে হচ্ছে চাকরি জীবন।

এই দাবি বঙ্গেরই এক দায়িত্ববান পুলিশ আধিকারিকের। সেই পুলিশের একাংশের প্রতি সাধারণ মানুষের আজন্মের রাগ। সে দায় নিজেরাও এড়াতে পারেন না তাঁরা। অথচ রীতিমতো কলম খুঁড়ে যোগ্যতা প্রমাণ করে গায়ে চাপাতে হয়েছে উর্দি। পেতে হয়েছে তকমা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দ্রুত গতির যুগে থানা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কোনও দুষ্কর্ম হয়ে গেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পুলিশের হয়ে যায় আঠারো মাস পার। জনতা ক্ষোভ উগরে দেয় পুলিশের ওপর। জনগণের আদালত থেকে দুষ্কৃতিকে সরিয়ে সেখানে আইনের শাসন দিতে গেলেও পুলিশকে শুনতে হয় অকথ্য শব্দ। কিন্তু কেন? সে প্রশ্ন করা অবশ্য শৃঙ্খলাপরায়ণ বাহিনীর মানা।

তবে পুলিশের এই প্রতিবাদ কার প্রতি? যারা একটি নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন তাঁদের প্রতি। তাঁদের প্রতি, যারা আন্দোলনে নেমে বলছেন পুলিশ সত্য ঘটনা ধামা চাপা দিচ্ছে? তাঁদের প্রতি যাঁরা বলছেন পুলিশ তুমি উর্দি ছাড়ো তৃণমূলের ঝান্ডা ধরো? যদি তাই হয় তা হলে ভয়ঙ্কর! পুলিশ রাষ্ট্রের। তার কোনও দল নেই।

যদিও শাসকদলের তল্পিবাহক ছাড়াও নৃশংস হত্যাকান্ডের তদন্ত শেষে উর্দি খুলতে খুলতে যে একাংশ পুলিশের চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে তারাও একজন পুলিশ। সেও একজন বাবা। সেও একজন মা। তারও কোনও আনন্দ নেই। শুধু আছে কর্তব্য। যেখানে আবেগের প্রবেশ নিষেধ।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আরও পড়ুনঃ সন্দীপ ও তাঁর একটি কাঁচি কাহিনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights