মুর্শিদাবাদের অধীরই জেলার শেষ জাতীয় নেতা

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্রঃ বহরমপুরের অধীর চৌধুরী একজন জাতীয় নেতা। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। দলের নীতি নির্ধারণে তাঁর মতের গুরুত্ব দেয় দল। সম্প্রতি ঝাড়খন্ড বিধানসভা নির্বাচনে দলর পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েও সেখানে সফল ভারতের প্রাক্তন রেল প্রতিমন্ত্রী। তিনি হেরে গিয়েছেন ২০২৪-এ। তবুও অধীরেই বিশ্বাস এখনও অটুট দলের। ব্যতিক্রম নয় মুর্শিদাবাদবাসীও। আজ অধীর যেখানে যান তাঁর সঙ্গে যায় মুর্শিদাবাদ। সংবাদ মাধ্যম চৌধুরীকে এড়িয়ে যেতে পারে না। একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তির এই মর্যাদা তাঁর সহকর্মীদের কাছে ঈর্ষণীয় তো বটেই। ত্রিদিব চৌধুরী, ননী ভট্টাচার্যের পর অধীর চৌধুরীই মুর্শিদাবাদের এখনও পর্যন্ত শেষ জাতীয় নেতা।

শুধু বর্তমানেই নয়, আগামী দিনে মুর্শিদাবাদের আর কোনও নেতা রাজনীতির জাতীয় মঞ্চে এমনভাবে বিচরণ করতে পারবেন কিনা সন্দেহ। রাজ্যের বর্তমান শাসকদলের মুর্শিদাবাদেই কুড়ি জন বিধায়ক। বিরোধী বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা দুই। এই বাইশ জন বিধায়ক বিধানসভা ছাড়া কলকাতা যান ব্যক্তিগত কাজে। ব্যতিক্রম দু-একটি ক্ষেত্র ছাড়া। এলাকায় আবার দুই দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল। সেখানে কোনও এলাকায় বিধায়কের বিধানই শেষ কথা, কোথাও আবার স্থানীয় নেতাই ছড়ি ঘোরান বিধায়কের চৌহদ্দিতে।

তিন সাংসদের মধ্যে আবু তাহের খান, খলিলুর রহমান মমতা ঘনিষ্ঠ। তাঁরা অবশ্য দিল্লিতে বিজেপিকে বিঁধতে যান, কিন্তু লক্ষণ রেখা ওই পর্যন্তই। ওই দলেরই বর্তমান আর এক নেতা মইনুল হাসানকে তাঁর আগের দল যদিও বা টুকটাক জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব দিয়েছিল, এই আমলে অবশ্য “তাঁর কথা দিদি জানেন কি?” প্রশ্ন করেন দলেরই জেলা নেতারা। আর এই ‘হট্টমেলার দেশে’ মাঝে মধ্যেই গুরুত্ব চেয়ে বাংলার বাতাস ভারী করেন রেজিনগরের হুমায়ুন কবীর।

৩৪ বছরের বাম আমলে একসময় বিরোধী কংগ্রেস, বামেদের হঠিয়ে মুর্শিদাবাদের মাটিতে নিজেদের পতাকা উড়িয়েছিল। এমনকি বাম জমানার শেষেও আরও দশ বছর জেলায় প্রাসঙ্গিক ছিল কংগ্রেস। নেপথ্যে সেই অধীর চৌধুরী। দল তাঁকে গুরুত্ব দিয়ে প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে। ইউপিএ ২ সরকারের জমানায় তিনি রেল প্রতিমন্ত্রীর মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন দলেরই সবুজ সংকেতে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। সেই সময় কংগ্রেস তাঁকে লোকসভায় বিরোধী দলনেতার মর্যাদাও দিয়েছে। রাজনীতির পথ তাঁর জন্য কখনই ফুল বিছানো ছিল না।

এমনটা না হতেই পারত সোনিয়া গান্ধীর দলে। অধীর চৌধুরীর বদলে দিল্লির কোনও সাংসদকে দায়িত্ব দিতেই পারতেন রাহুল গান্ধীরা। দেন নি। গুরুত্ব দিয়েছেন যোগ্যতাকে। গুরুত্ব দিয়েছেন দলের অনুগত সৈনিককে। অধীর চৌধুরীও সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেকে জাতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেই একই দলের আর এক নেতা পরিবর্তনের সরকারের আমলে রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছিলেন। কংগ্রেস মনোজ চক্রবর্তীকেও সেই সুযোগ দিয়েছে। এটাই কংগ্রেসের ঘরানা। সে বরকত গনি খান চৌধুরীই হোক কিংবা আবদুস সাত্তার সবার ক্ষেত্রে আনুগত্যের থেকেও যোগ্যতাই শেষ কথা হয়েছে দলে।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে আর একটি কথাও সমানভাবে প্রযোজ্য অধীর ও মনোজের ক্ষেত্রে। উভয়ের সামনেই ছিল কংগ্রেস ছেড়ে রাজ্য কিংবা কেন্দ্রের শাসকদলের পতাকা বয়ে বেড়ানোর লোভনীয় সুযোগ। কিন্তু নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয়কে কোনও প্রলোভনের সামনে বিকিয়ে না দেওয়ায় আজ মুর্শিদাবাদবাসীই শুধু নয় রাজ্যবাসীর কাছে তাঁরা সম্মানীয় নেতা। একথা ঘাসফুলেরও অজানা নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights