সংবাদ প্রতিনিধি, কলকাতাঃ রাজ্যের পালাবদলের বছর খানেকের মাথায় নতুন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পড়াতে এসেছিলেন অর্থোপেডিক সার্জেন সন্দীপ ঘোষ। সেই সময় তিনি ছিলেন অস্থি বিভাগের প্রধান (Head of the Department). হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেই সময় তাঁর নামে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ তুলেছিলেন অপারেশন থিয়েটারের এক সিনিয়র টেকনিশিয়ান। যদিও তদন্ত বেশিদূর গড়ায়নি সেই সময়। সেটা ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। অভিযোগ ওঠার পরেও একবছর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে পড়িয়েছিলেন সন্দীপ। তাঁরই এক ছাত্রের দাবি, “স্যারের সেই সময়ের হাবভাবেও ছিল ডোন্ট কেয়ার মানসিকতা। মনে হত মাথায় কারও হাত আছে।” বর্তমান কলেজ কতৃপক্ষ অবশ্য বলেন “আমি তখন ছিলাম না বিষয়টি জানিও না।”
সেই সন্দীপ ঘোষ সদ্য পদত্যাগী আরজিকর হাসপাতালের অধ্যক্ষ। সোমবার সকালে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের চাপের কাছে অবশেষে মাথা নোয়ান তিনি। পদত্যাগ করেন সরকারি অধ্যক্ষ ও অধ্যাপক পদ থেকে। তবে সাংবাদিক সম্মেলনের সময় নির্যাতিতা চিকিৎসকের নাম মুখে এনে ফাউল করলেন তিনি। দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কোনও নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ্যে আনা সম্পূর্ণ বেআইনি। সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে যাওয়ার পথে সন্দীপ আরজিকর হাসপাতালেই একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। পরে স্বাস্থ্যভবনে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে তিনি বলেন, ” মেয়ের মৃত্যুর দায় নিয়ে সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করলাম।”
চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার আগে জানিয়ে গেলেন তিনি স্পষ্ট বক্তা হওয়ায় তাঁর শত্রু তৈরি হয়েছে। তিনি সরকারি নির্দেশ পালন করেছেন মাত্র। এও বলেন, “এই হাসপাতাল ছিল ঘুঘুর বাসা। তোলাবাজি চলত। আর তাতে নেতাদেরও মদত ছিল। আমি এসে বন্ধ করেছি সে সব।” এখন এই হাসপাতালে তোলাবাজি হয় না। জন্ম বা মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে অপেক্ষা করতে হয় না। ঘুষ দিতে হয় না। তাঁর আমলেই সেসব বন্ধ হয়েছে বলে দাবি করেন সন্দীপ। তাঁর অভিযোগ, “এই ঘটনার সঙ্গে কয়েক জন অধ্যাপক জড়িত। তাঁরা আমার সঙ্গে পেরে ওঠেননি। তাই আমার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। আমি কখনও কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করিনি।’’
তবে ‘স্পষ্টবক্তা’ অধ্যক্ষ অধ্যাপক সন্দীপ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার পড়ানো নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। এক চিকিৎসক বলেন, “অস্থি বিভাগের প্রধান হয়ে সেই সময় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন সন্দীপ। তার বাড় বাড়ন্ত মাত্রা ছাড়ায় মুর্শিদাবাদ ছাড়ার পর।” বছর খানেক আগে তাঁকে আরজিকরে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে ফের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে প্রথমে সুপার ও পরে অধ্যাপক পদে বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্যভবনের সেই নির্দেশ নিমেষে বদলে গিয়েছিল। সন্দীপ ফিরে গিয়েছিলেন স্বপদেই।
আরও পড়ুনঃ বিজেপি শাসিত রাজ্যে ঘাড়ধাক্কা খাচ্ছে বাংলার শ্রমিকরা