আজও পড়ুয়াদের ভরসা এবিটিএ-র টেস্ট পেপার

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রাজ্যের ক্ষমতা হস্তান্তর চোদ্দ বছর হয়ে গিয়েছে। লাল পতাকার জায়গা নিয়েছে জোড়াফুল। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের হাত থেকে আজও সরানো যায়নি এবিটিএ-র টেস্ট পেপার। সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন অল বেঙ্গল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন বা নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য ১৯৩৭ সাল থেকে এই টেস্ট পেপার প্রকাশ করে আসছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যও বিভাগ অনুযায়ী প্রশ্নপত্রের সংকলন প্রকাশ করে এবিটিএ। ডিজিটাল যুগেও বদলায়নি বই দুটির প্রচ্ছদ।

আগে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের প্রত্যেকটি বিষয়ের টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের একটি বাছাই করা সংকলন হিসেবে এই বই পেত পড়ুয়ারা। এখন অবশ্য বাছাই করা শিক্ষকদের দিয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করানো হয়। সেক্ষেত্রে সংগঠনের সদস্যই হতে হবে এমন কোনও ছুঁৎমার্গ অবশ্য নেই বলেই জানাচ্ছেন সংগঠনের নেতারা। দু’শো টাকার কাছাকাছি দাম হওয়া সত্ত্বেও সেই প্রশ্নপত্র সংকলনের চাহিদায় ভাঁটা পরেনি আজও।

বহরমপুরের এক পুরনো পুস্তক বিক্রেতা প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ” অন্য প্রকাশকের তুলনায় এবিটিএ- প্রকাশিত টেস্ট পেপারের চাহিদা বেড়েছে বই কমেনি।” সংগঠনের মুর্শিদাবাদ জেলার সম্পাদক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চলতি বছর জেলার জন্য বারো হাজার বইয়ের অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। এখন আর আমাদের কাছে কোনও বই নেই, কিন্তু চাহিদা এখনও মেটেনি।” এই মাসের তিন তারিখ বইটি প্রকাশিত হয়েছে। আর চলতি বছর এবিটিএ তিন লক্ষ টেস্ট পেপার ছাপিয়েছে। এবছর চাহিদা বেশি থাকায় আরও বই ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। গত বছরের মাধ্যমিক টেস্ট পেপারে ইতিহাসের প্রশ্নে “আজাদ কাশ্মীর” কী জানতে চাওয়ায় বিতর্ক বেঁধেছিল রাজ্য জুড়ে। এবার এখনও তেমন কোনও বিতর্কিত প্রশ্ন চোখে পড়েনি বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।

ওয়েস্ট বেঙ্গল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য টেস্ট পেপার প্রকাশ করে। ওয়েস্ট বেঙ্গল হেড মাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ও কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়াদের জন্য টেস্ট পেপার ছাপাচ্ছে। কিন্তু এখনও এবিটিএ-র টেস্ট পেপারের জায়গা তারা নিতে পারেনি বলেই দাবি পুস্তক বিক্রতাদের। মধ্যশিক্ষা পর্ষদও বিনা পয়সায় টেস্ট পেপার পড়ুয়াদের বিতরণ করে, মানের বিচারে গ্রহণ যোগ্যতা এখনও এবিটিএ-র নিচে, দাবি শিক্ষকদের একাংশের।

পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল সেকেন্ডারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী বলেন, ” এর অন্যতম কারণ আমাদের সংগঠনের শিক্ষকরা এবিটিএ-র বইটিই পছন্দ করেন। তাঁরা খাতায় কলমে আমাদের সংগঠনের সদস্য কিন্তু এবিটিএ-র সঙ্গে তাঁদের নিবিড় যোগ।” পর্ষদ থেকে পড়ুয়াদের সরকারি টেস্ট পেপার ব্যবহার করবার কথা বলা থাকলেও শিক্ষকদের একটা বড় অংশ তার প্রচার করেন না বলেই অভিযোগ তাঁর।

তিনি আরও বলেন, ” পড়ুয়ারা রাজ্যের ভাল ভাল স্কুলের তৈরি বাছাই প্রশ্নপত্র পড়বার সুযোগ পায় পর্ষদের বই থেকে। এবিটিএ -র মতো বাজার থেকে ১৭৫ টাকা দাম দিয়ে কিনতেও হয়না। কিন্তু শিক্ষকরাই সে বইয়ের প্রচার করেন না।” তাছাড়াও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বইটি এবিটিএ-র টেস্ট পেপারের অনেক পরে প্রকাশিত হয়। ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে। পর্ষদের টেস্ট পেপার এখনও প্রকাশিত হয়নি। একাংশ শিক্ষক জানান, বইটি প্রকাশিত হতে হতে ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ হয়ে যাবে। পাশাপাশি রাজ্যের সর্বত্র সেই বইয়ের সরবরাহও তেমন হয় না। সময়ে না পাওয়ায় বিনা পয়সায় দেওয়া সরকারের বই স্কুলেই পরে থাকে বলে অভিযোগ একাংশ শিক্ষকের। সেই সুযোগেও এবিটিএ-র টেস্ট পেপারের চাহিদা থাকে বলে দাবি।

2 thoughts on “আজও পড়ুয়াদের ভরসা এবিটিএ-র টেস্ট পেপার

  1. ১৯৮৩-তে মাধ্যমিক দেবার সময় এবিটিএ-র টেস্ট পেপার সগৌরবে চলতে দেখেছি। কিনেছি, প্র্যাকটিস করেছি তা থেকে, কিন্তু সেকালে ডব্লিউবিটিএ বা এসটিইএ-র টেস্ট পেপারের স্থান অগৌরবের ছিল না। এসটিইএ-র বইয়ে বেশ কিছু অঙ্কের প্রশ্ন থাকতো একটু কঠিন। সে সব স্কুলের প্রশ্ন আবার এবিটিএ-তে থাকতো না। সংগঠিত উদ্যোগে বামরা বরাবরই এগইয়ে অধ্যদের থেকে, ফলে বাকি দুই প্রতিদ্বন্দ্ব্বী বিক্রির দিক থেকে এবিটিএ-র টেস্ট পেপারের কাছে নিতান্তই শিশু ছিল। একালে তৃণমূল অন্য কিছু বিষয়ে দক্ষতার ছাপ রেখেছে, এবিটিএ বা ডব্লিউবিটিএ সেখানে নেহাৎ বালখিল্য। মা সরস্বতীর সঙ্গে পরের এই দুই সংগঠনের আর যাই হোক ভাসুর-ভাইবৌ সম্পর্ক ছিল না কখনও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights