ভিন রাজ্যের শ্রমিকরাও মাথা নোয়ালেন বুদ্ধদেবের প্রতিকৃতির সামনে, আজ সবাই যেন কমিউনিস্ট

Social Share

বিপ্লব মুখার্জী, কলকাতাঃ জনস্রোতে ভেসে কলকাতার এনআরএসে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে শুক্রবার পৌঁছেছে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মরদেহ। কাতারে কাতারে মানুষ তাঁর শেষ যাত্রায় অংশ নিয়ে কার্যত অবরুদ্ধ করেছিলেন শিয়ালদহ চত্বর। আবেগ মানেনি কোনও বারণ। যত উঁচুতে ওঠা যায় তত ছোট মনে হয় নিচের জমাট বাঁধা ভিড়কে। লাল আর সাদা পতাকার সারি দেখে মনে হয় কারা যেন গোলাপের পাঁপড়ি ছিটিয়ে দিয়েছে সেই ভিড়ে। কাছে এলে ভিড়ের অন্ত মেলে না।

বাম যুব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চিরনিদ্রায় শায়িত শববাহি শকটে। সেই শকট ঘিরেই এত উন্মাদনা মানুষের। শুধু কি কলকাতাবাসী? বাংলার দূর দূরান্তের গ্রাম থেকে শেষবারের মতো পরিচ্ছন্ন, সৎ (সম্ভবত শতাব্দীর শেষ) একজন রাজনীতিকের ঘুমন্ত চোখ দুটি একবার দেখতে ছুটে এসেছেন কত মানুষ। আজ সবাই তাঁরা কমিউনিস্ট। ভিড় দেখে সন্দেহ জাগে। ১৩ বছর আগে রাজ্যের শাসন থেকে সরিয়ে ফেলবার পরেও এত মানুষ বুদ্ধ প্রেমী? একি ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি না কি সবটাই ক্ষণিকের আবেগ। নাকি তাঁকে ছুঁয়ে আরও একটু সাংস্কৃতিক হয়ে ওঠার চেষ্টা। সেই ভিড়ের ছবি তুলতেও মনে থাকছে না। হাত যেন সরছে না। কথা যেন বেড়চ্ছে না।

এও এক শপথ। সামনে লড়াই তৈরি হও। নিজস্ব চিত্র।

মহঃ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, আভাস রায়চৌধুরীরা একহাতে সামলাচ্ছেন নিজের দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে, আর এক হাত দিয়ে কখনও বিরোধী, কখনও জোটসঙ্গী দলের নেতাদের জন্য ভিড় ঠেলে রাস্তা করে দিচ্ছেন তাঁদের নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ হিসেবে তাঁদের সঙ্গে শোকালাপ করছেন বৃদ্ধ বিমান বসু। কলতান দাশগুপ্ত, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, সৃজন ভট্টাচার্য, দীপ্সিতা ধরদের শশব্যস্ততা দেখে মনে হচ্ছিল এদের হাতেই আগামী লড়াইয়ের ব্যটন তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছেন বুদ্ধবাবু। যেমনভাবে হিন্দু আচার মেনে মৃতদেহের কানে শোনানো হয় গীতার বাণী, আমৃত্যু কমিউনিস্ট বুদ্ধদেবের কানে ধ্রুবরা বলে গেল রাস্তা জুড়ে “রেড স্যালুট, রেড স্যালুট, রেড স্যালুট কমরেড”। “লাল লাল লাল সেলাম কমরেড।” “ভুলছি না ভুলবো না কমরেড”।

পরিযায়ী শ্রমিকদের বুদ্ধদেব স্মরণ। নিজস্ব চিত্র

না বুদ্ধবাবুকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিদায় জানাতে পারেনি রাজ্য। যেভাবে বিদায় জানানো হয়েছিল আর এক কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে। তবে নেতাদের কথায়, রাজকীয়তা ছিল না ঠিকই কিন্তু তৃপ্তি ছিল। কোনও সরকারি সহযোগিতা ছাড়াও এভাবে সুশৃঙ্খলভাবে নিজেদের নেতাকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়ে কীভাবে বিদায় জানাতে হয় সুষ্ঠ সংস্কৃতি বজায় রেখে সেই বার্তা দেওয়াও বোধহয় এদিন ছিল সিপিএমের পরিকল্পিত ছক। এনআরএস কতৃপক্ষের হাতে বুদ্ধবাবুর ইচ্ছেমতো দেহদান করে শেষবারের মতো যেন ডুকরে কেঁদে উঠলেন বুদ্ধ জায়া মীরা। স্থির সজল চোখে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সুচেতন। তাঁদের দেখভালের দায়িত্বও এখন ধ্রুব, মীনাক্ষীদের।

সারাদিন কাজে মন বসেনি আব্দুর জাব্বার, ফারুকদের। কর্ণাটকের পরিযায়ী শ্রমিক ওরা। ওরাও ওখানে বাম শ্রমিক সংগঠন করে। বুদ্ধদেবের একটি আলোকচিত্র জোগাড় করে মালা দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েছে জাব্বার। জেলায় জেলায় বুদ্ধ স্মরণে সিপিএম যেমন অর্ধনমিত রেখেছে দলীয় পতাকা। জাব্বাররাও অর্ধনমিত রেখেছে দলের পতাকা। জানিয়েছে ” বুদ্ধবাবু আমাদের নিজের মাটিতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন আমরা যেন নিজভূমে দু’মুঠো করে কম্মে খেতে পারি। কিন্তু রাজ্যবাসী সে সুযোগ তাঁকে দিলেন না। উনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন চিরদিনের জন্য।”

  • ফিচার ছবি ওয়েস্টবেঙ্গল সিপিএমের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া।

আরও পড়ুনঃ খালেদা পুত্রকে টেক্কা দিতেই রাজনীতিতে আগ্রহ হাসিনা পুত্রের?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights