রোশনাই হারিয়েছে আলো, ভিড়ও উৎসবহীন

Social Share
বিষ্ণুপুর আমরা ক’জন ক্লাবের পুজো মন্ডপ।

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ এমন দুর্গোৎসব শেষ কবে দেখেছে বাংলা? আদৌ কী দেখেছে উৎসবের এমন কঙ্কালসার দেহ। নিহত সহকর্মীর ন্যায় বিচার চাওয়ার পাশাপাশি উলঙ্গ হয়ে যাওয়া রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বদল চেয়ে অনশনে বসেছেন সাত জুনিয়র চিকিৎসক। প্রতিবেদন লেখাকালীন কিছুক্ষণ আগে অনশনরত চিকিৎসক অনিকেত মাহাতকে আরজিকর হাসপাতালে উদ্বেগজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে। মেট্রো চ্যানেলে অনশনকারী আরও ছ’য় চিকিৎসকের শারীরিক অবস্থা ভাল নয়।

বিটি কলেজ বটতলা ভট্টাচার্য পাড়া পুজো কমিটির প্রতিমা।

অন্যদিকে এই মহানগরেই উৎসবের উদযাপন করছেন মানুষজন। কেউ কেউ অবশ্য প্রতিবাদেও আছেন। এই ছবি শুধু কলকাতায় নয়, মফঃস্বলেও একই ঘটনা ঘটছে। দুর্গাপুজোয় মানুষ ভিড় করে আছেন মন্ডপে, প্রতিমা দেখার লাইনে। তেমনি কেউ কেউ আছেন প্রতিবাদেও। বহরমপুরেও সপ্তমীর রাতে উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্র মধ্যরাতেও মানুষের ঠাকুর দেখার ভিড় হয়েছে। বিশেষ করে চুনাখালি নিমতলা, মধুপুর, বিষ্ণুপুর, কান্দি বাসস্ট্যান্ড, ভট্টাচার্য পাড়ায়।

কান্দি বাসস্ট্যান্ড দুর্গাপুজোর মন্ডপ ও প্রতিমা দেখতে ষষ্ঠীর দিন বৃষ্টি থামার পরে লাইন দিয়ে অপেক্ষায় মানুষজন

একইভাবে লালবাগেও মানুষের বিরাম নেই প্যান্ডেল হপিংয়ে। নদিয়ার কৃষ্ণনগর, বাদকুল্লা, রানাঘাটের মানুষজনও মন্ডপমুখী বলেই খবর এসেছে। নিয়মমাফিক সময়ে পুজো শুরু হয়েছে। মানুষজনও ঠাকুর দেখতে বেড়িয়েছে অভ্যেসেই। কিন্তু সেই উচ্ছ্বাসটা নেই। আলোগুলো কেমন নিস্তেজ দেখাচ্ছে। বহরমপুরে বিষ্ণুপুরের প্রতিমা দর্শন করতে এসে এমনটাই দাবি করলেন সুবীর পাল। সুবীর একা নন, তিনি ও তাঁর কলেজ পড়ুয়া ভাই দলবেঁধে বহরমপুরে এসেছেন পাশের লালবাগ থেকে। সুবীর জানান, তাঁরা নিজের নিজের এলাকায় এর প্রতিবাদেও আছেন। বহরমপুরে কল্পনা মোড়ে বিভিন্ন স্কুল কলেজের প্রাক্তনীরা নীরব প্রতিবাদ করে অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন। নাগরিক সমাজের একাংশ সন্ধ্যায় প্রতিবাদ মিছিলেও অংশ নিয়েছিলেন। তেমনি শহরের রেস্তরাঁ গুলোয় ভিড়ও হয়েছে বেশ রাত অবধি। সবটাই হয়েছে।

বিষ্ণুপুর আমরা ক’জন ক্লাবের প্রতিমা

কিন্তু পুজোর পথঘাটে যে উদ্দিপনা, হুল্লোড় দেখে অভ্যস্থ শহর ও শহর লাগোয়া অঞ্চল তা এবার যেন খানিকটা বেলাইন, বলছিলেন তারক মন্ডল। তারক গোরাবাজারের বাসিন্দা। তাঁর নিজেরই একটি মুদিখানা দোকান আছে। অবসরে টোটো চালান। চুনাখালি পর্যন্ত টোটোতে করে নিয়ে এসেছেন চুয়াপুরের এক পরিবারের চার সদস্যকে। তাঁরাই না কি কাশিমবাজার ভাটপাড়ায় একটি জলসায় স্থানীয়দের নাচ দেখে ছিঃ ছিঃ করছিলেন। বলছিলেন, ” এদেরই জন্য ডাক্তাররা মরতে বসেছে। আর এরা নেত্য করছে।” তবে পুজো উদ্যোক্তারা বলছেন মানুষ উৎসবেই ফিরেছেন।

চুনাখালির একটি পুজো মন্ডপ ও প্রতিমা দেখতে ভিড় করেছেন শহর ও শহর লাগোয়া মানুষজন।

বিষ্ণুপুর অনামী ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তা সনু বাজপেয়ী বলেন, ” ভাল করে লক্ষ্য করুন মুর্শিদাবাদে কতটা আন্দোলন হচ্ছে। দু’এক জায়গায় যে মানুষ বিচার চেয়ে পথে নামেননি তা নয়। কিন্তু সার্বিকভাবে মানুষ উৎসবেই আছেন।” তৃণমুল কাউন্সিলর তথা কান্দি বাসস্ট্যান্ড পুজো কমিটির মূল উদ্যোক্তা ভীস্মদেব কর্মকার। তিনি বলেন, “দুর্গা পুজো আমাদের কাছে আবেগ। সেই আবেগে ভেসে মানুষ উৎসবে ফিরেছেন। এটা ঠিক রাজ্যে একটি ভয়ংকর কান্ড ঘটেছে। আমরাও তার বিচার চেয়ে মুখিয়ে আছি।” চুনাখালি সর্বজনীন পুজো কমিটির সম্পাদক কাঞ্চন মন্ডলের আবার দাবি, ” আমাদের মন্ডপের লাইট অ্যান্ড সাউন্ড দেখে মানুষের এত উৎসাহ যে নাচ থামানো যাচ্ছে না।”

বহরমপুরে প্রতিবাদ অবস্থান প্রাক্তনীদের। ছবিঃ তারিক রসুলের ফেসবুক সূত্রে

এক উদ্যোক্তা তর্কহীন থাকতে নাম প্রকাশে নারাজ। তিনি বলেন, ” ফেসবুকে পোস্ট হওয়া প্রতিবাদীদের ছবিগুলো দেখলেই বুঝবেন এই প্রতিবাদ কতটা আন্তরিক। আসলে এই প্রতিবাদটা ভার্চুয়ালি যত হচ্ছে, বাস্তবে তত হচ্ছে না। নিশ্চয় কিছুজন আন্তরিকতার সঙ্গে প্রতিবাদ করছেন কিন্তু অধিকাংশজনই ভেসে থাকতে চাইছেন। ” তাঁর আরও দাবি, “করোনাকালেও বিধির ব্যারিকেড ভেঙে উৎসবমুখর ছিল বাঙালি। এবার যেন ধরি মাছ না ছুঁই পানি ভাব তাদেরই।” বহরমপুরের বাসিন্দা মানসী সেনগুপ্ত সার্বিক পরিস্থিতিতে বিভ্রান্ত। বলছেন, ” শুধু আমি নই। পুজো কতৃপক্ষ, পুজোর জোগাড় যিনি করছেন সেই মহিলা, পুরোহিত, দর্শক সবাই বিভ্রান্ত। বুঝতে পারছেন না কোন তিথি চলছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights