
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ দিন কয়েক আগে দিল্লির জয়ে গেরুয়া আবির উড়েছিল বিজেপি’র বহরমপুর কার্যালয়ে। সেই বিজেপির ঘরেই হঠাৎ কাচ ভাঙার আওয়াজ শুনতে পেলেন শহরবাসী রোববার রাতে। সোস্যাল মিডিয়ার ওয়াল ফেটে চৌচির দলের আলোচনা, পাল্টা সমালোচনায়। এমনিতে জেলা সভাপতি নয়, সামান্য মন্ডল সভাপতি তাও পঞ্চায়েত এলাকার, নাম ঘোষণা করতে গিয়ে লোকসভা নির্বাচনের পর প্রায় ন মাস পার করে দিয়েছে বিজেপি। অনেক ফর্ম ফিল ইন, বাছাই পর্ব পেরিয়ে যখন সেই মন্ডল সভাপতির তালিকা প্রকাশিত হল নিরাপদ দূরত্বে থাকা এক নেতার দাবি, ” বুঝলেন তো একেই বলে পর্বতের মুষিক প্রসব।”
বিজেপি বহরমপুর সংগঠনের জেলা সভাপতি যখন তাঁর ফেসবুকে দেওয়ালে সাঁটিয়ে দিচ্ছেন নয়া মন্ডল সভাপতিদের নামের তালিকা, তখন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কেউ তালিকার একটা স্ক্রিন শট তুলে দিয়ে নিচে লিখছেন “বিজেপিতে সুকান্ত মজুমদারের বর্তমান রাজনীতি খুবই জঘন্য এবং উনি একজন অপদার্থ ও অযোগ্য রাজ্য সভাপতি।”
শনিবার থেকেই আভাস মিলছিল। সেই পূর্বাভাস মিলিয়ে রবিবার ফের একবার শাখারভের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন দলেরই পরিচিত মুখ। এমনিতেই বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্র-র সঙ্গে সাপে নেউলের সম্পর্ক শাখারভের। কিন্তু মন্ডল তালিকা প্রকাশের পর দেখা গেল দলে শাখারভ বিরোধিতা বেড়েছে আগের তুলনায় ঢের বেশি। সংঘ ঘনিষ্ঠ শহরের এক পরিচিত মুখ তীব্র বিষোদগার করেন শাখারভের বিরুদ্ধে নয় দলের বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি। ওই নেতার বৃত্তে থাকার আর এক নেতার দাবি, ” এই মন্ডল সভাপতি, রাজ্য সভাপতি বাছা এখন নেতাদের অর্থ তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে বিজেপিতে। কেউ কোনও আদর্শের জন্য বিজেপি করে না। টাকা দিলেই মেলে পদ।”
নয়া তালিকা অনুযায়ী বহরমপুর মণীন্দ্রনগর পঞ্চায়েতে ফের মন্ডল সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন কুশল মন্ডল। যিনি শাখারভ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সংঘ ঘনিষ্ঠ ওই নেতার দাবি, “এলাকার বিজেপি কর্মী সমর্থকদের দাবি ছিল ওই এলাকায় বিজেপির নীতি আদর্শে চলা অভিজিৎ দাশগুপ্তকে মন্ডল সভাপতি করতে হবে। কিন্তু অমিতাভ রায়, প্রবাল রাহারা নির্বাচনের নামে প্রহসন করে ওর নাম বাদ দেয়। আমাদের রাজ্য নেতৃত্বের এই দুটি মানুষ নেতা নয়, এরা ক্লাস্টার। এরা গণতন্ত্রে নয় স্বৈরতন্ত্রে বিশ্বাসী।”
প্রকাশিত মন্ডল তালিকায় কে পদ পেল আর না পেল তা নিয়ে কোনও আগ্রহ নেই বহরমপুরের বিজেপি বিধায়কের। তিনি স্পষ্ট বলেন, ” রাজ্য নেতৃত্ব বলে দিয়েছিল স্থানীয় বিধায়ক বা প্রাক্তন জেলা সভাপতির মতামত নিয়ে এইধরনের পদের জন্য উপযুক্ত নেতার নাম পাঠাতে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার কোনও মতামত নেওয়া হয়নি। আমি মনে করি পদে থাকলেই সংগঠন করা হয় না। দরজার বাইরে দলের অনেক যোগ্য কর্মী আছেন যারা পদে থাকলেও দল করবেন পদে না থাকলে আরও বেশি করে দলের কাজ করবেন। কিন্তু দল যদি মনে করে তাদের গুরুত্ব নেই এইভাবেই চলবে, চলুক। আমার আপত্তি নেই।”
বিতর্কের কোনও জবাব নেই বলে জানিয়ে শাখারভ নিজের জায়গা পরিস্কার করে বলেন, ” মন্ডল সভাপতি নির্বাচন কোনও বানচাল হয়নি। আমাদের মন্ডল স্তরে বৈঠক করে আলোচনা করে পাঁচ থেকে সাতটি নাম উঠে এসেছিল। সেখান থেকে জেলা থেকে তিনটি নাম পাঠানো হয়েছিল প্রত্যেক মন্ডল থেকে। রাজ্য সবার খোঁজ খবর নিয়ে একজনকে বেছে নিয়েছে।” তাঁর দাবি অনুযায়ী বহরমপুর সংগঠনের দশটি মন্ডলের মধ্যে নতুন পাঁচজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও দুজন মহিলা।