
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ লক্ষ্মীপুজোর দিন সাত সকালে হাঁটতে গিয়ে বহরমপুরে খুন হয়ে গেলেন এক তৃণমূল নেতা। সকাল ছ’টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ভাগীরথীর ওপারে রাধারঘাট এক নম্বর অঞ্চলের নাথ পাড়ায়। মৃত ব্যক্তির নাম প্রদীপ দত্ত (৫৫)। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো বুধবারেও প্রাতঃভ্রমণে বেড়িয়েছিলেন তিনি। সেই সময় বাইক করে দুই দুষ্কৃতি এসে তাঁকে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

তবে খুনের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ অপরাধীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। যদিও প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাজিদ ইকবাল খান বলেন, ” সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যাচ্ছে দু’জন দুষ্কৃতি বাইকে করে এসেছিল। তিন থেকে চার রাউন্ড গুলি চলেছে। এদের সঙ্গে আরও কেউ ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তবে খুনের নেপথ্য কারণ কী তা এখনও নিশ্চিত নয় বলে জানান তিনি।

২০০৩ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ওই এলাকায় কংগ্রেসের উপ-প্রধান ছিলেন নিহত প্রদীপ। পরে দলবদল করে তৃণমূলে নাম লেখান। তিনি গোয়ালজান নিয়াল্লিশ পাড়া অঞ্চলের তৃণমূলের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতিও ছিলেন। একসময় এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিলেন প্রদীপ। যদিও দলের সঙ্গে ইদানিং তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না বলেই দাবি তৃণমূলের একাংশের।
জমি-বাড়ি সংক্রান্ত ব্যবসাতেই তিনি নিজেকে থিতু করেছিলেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি। তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য রাজীব হোসেন তৃণমূলের সঙ্গে নিহত প্রদীপের কোনও যোগাযোগ নেই দাবি করে বলেন, “কেন এলাকার একজন ব্যবসায়ীকে খুন হতে হল সাত সকালে তা এখনও ঠাওর করতে পারছি না। এলাকায় না আছে কোনও রাজনৈতিক উত্তেজনা, না আছে কোনও অশান্তি, তবু কেন খুন হল তা একবাক্যে বলা মুশকিল।”
যদিও ব্যবসায়ীক কারণেই এই খুনের নেপথ্য কারণ হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী। তবে ওই এলাকার সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক স্বপন ঘোষ বহরমপুরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে দাবি করে বলেন, ” পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বিরোধী শিবিরের প্রার্থীদের খুনের ষড়যন্ত্র করেছিল যে তৃণমূল, সেটাই যে বুমেরাং হয়ে ফিরছে না তাই বা কে বলতে পারে। এলাকায় বিঘে বিঘে জমি, বাড়ি সবেতেই তৃণমূলের মালিকানা। তাই ঠিক কী কারণে খুন হয়েছে তা পুলিশই বলতে পারত। কিন্তু তারাও আজকাল কিছু দেখে না। যদিও এই খুনের সঠিক তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত।”
জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ” যেখানেই বালি খাদান, গরু চোর, জমিবাড়ির প্রোমোটারির খোঁজ পাবেন দেখবেন তৃণমূল যোগ রয়েছে। আর সেখানেই দেখবেন গোষ্ঠীকোন্দল জড়িয়ে। প্রদীপের হত্যাও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছু নয়। ভাগবাটোয়ারা থেকে অশান্তির জেরেই তৃণমূল তৃণমূলকে খুন করে চলেছে।”
বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্র বলেন, ” বহুদিনের তৃণমূল কর্মী। হয়ত লেনাদেনায় অসুবিধা হয়েছে তাই তৃণমূল তৃণমূলকে খুন করেছে। এই প্রদীপ এলাকায় রাহাজানি করত। জোর করে চাঁদা নেওয়া, জমি জায়গা দখল করা থেকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে পয়সা আদায় করেছে। আর সেই ভাগবাটোয়ারা থেকেই এই খুন করেছে তৃণমূলই। প্রশাসনের দম থাকলে আসল খুনিকে খুঁজে বের করুক।” ঘটনার জেরে এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ফরাক্কার নাবালিকার দেহ ময়নাতদন্ত শেষে গভীর রাতে হল সৎকার