সংবাদ প্রতিনিধি, কলকাতাঃ তাঁর বাড়িতে যখন ইডি হানা হয়েছিল আজ থেকে ৫২ দিন আগে তখন থেকে আজ পর্যন্ত দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোঁজ নেন নি। উল্টে ক্রমশ দীর্ঘ হয়েছে পারস্পরিক দূরত্ব। সেই দূরত্ব বজায় রেখেই তৃণমূলের বিধায়ক পদ ছাড়লেন বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। সোমবার বিধানসভায় গিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তিনি ইস্তফাপত্র জমা দেন। বিধানসভার মুখ্য সচেতক হলেও সেই সরকারি গাড়িতে না গিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতেই বিধানসভায় গিয়েছিলেন তিনি।
অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, “তাপস রায় চোর চোট্টা বলে মনে করি না। হতে পারে ভিড়ের মধ্যে পড়ে গেছেন।”
রবিবারের রাতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ফোন না ধরে দল ও বিধায়ক পদ ছাড়ার বার্তা একপ্রকার পাঠিয়েই দিয়েছিলেন তিনি। পরের দিন অর্থাৎ আজ সোমবার সাত সকালে দলের সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক কুনাল ঘোষ ও ব্রাত্য বসু বরানগরের বিধায়কের বাড়ি গেলেও অতিথি আপ্যায়ন ছাড়া তাদের অনুরোধ রাখতে পারেন নি বর্ষীয়ান এই তৃণমূল নেতা, দাবি সূত্রের। দলের একাংশ নেতা ও বিরোধীরা সম্ভ্রমের চোখে দেখে বিধায়ক তাপসকে।
জানুয়ারির গোড়ায় যখন পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে তাপস রায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন ইডির গোয়েন্দারা। সেই খবর চাউর হতেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, “তাপস রায় চোর চোট্টা বলে মনে করি না। হতে পারে ভিড়ের মধ্যে পড়ে গেছেন।” সেদিন অধীর আরও বলেছিলেন, “ আমি ওঁকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। উনি এই চরিত্রের বলে মনে করি না। তবে চোরের সঙ্গে থাকলে তো বদনামের ভাগীদার হতে হবে। এখন সঙ্গদোষে কিছু হলে আলাদা কথা। তবে তাপস রায়কে আমি যতদূর চিনি উনি দুর্নীতি করার লোক নন।”
কংগ্রেসের ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে উঠে আসা নেতা হলেন তাপস রায়। ছাত্র পরিষদের সভাপতি ছিলেন। তা ছাড়া উত্তর কলকাতায় বরাবরই ডাকাবুকো ও দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা বলে পরিচিত তিনি। বাম জমানায় তাপসবাবু কাউন্সিলর ও বিধায়ক দুই হয়েছেন।
আগামীকাল তাঁর বাড়িতে রাজ্যের দুই বিজেপি নেতা তাঁর বাড়িতে যাবেন। তবে দল ত্যাগের আগে বিধায়ক পদ ত্যাগ করায় প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। এমনিতেই উত্তর কলকাতায় দৌর্দন্ডপ্রপাত নেতা বলেই তাপসের পরিচিতি আছে। লোকসভা নির্বাচনের মুখে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি কি সাংসদ হিসেবে পদ্ম শিবিরের হয়ে লড়াই করবেন? তিনি কি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়াবেন। তাপসের ঘনিষ্ঠ মহল সেদিকে ইঙ্গিত দিলেও তাপস অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেন নি। উল্টে ২০০১ সাল থেকে তৃণমূলের সঙ্গী এই প্রবীণ রাজনীতিক সন্দেশখালি থেকে দলের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সংবাদ মাধ্যমের সামনে।ইস্তফা দিয়ে বিধায়ক বলেন, ” তৃণমূল আমার জন্য নয়। এখানে আমার থাকা উচিত নয়। আমি এখন মুক্ত পাখি।”