
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে আগামী কাল থেকে তিন দিন তিনটি নাটক দেখানো হবে। রবীন্দ্রসদন সূত্রে জানা যায়, বহরমপুর ও কান্দি পুরসভার যৌথ উদ্যোগে এই তিনটি নাটক দেখানো হবে। নাটক দেখতে দুই শহরের নাট্যদলগুলিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রায় আড়াইশো জন নাট্য দর্শক উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। দলের পক্ষ থেকে অশোক দাসকে সামনে রেখে একটি কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই মূলত নাটকের দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে দর্শক আনার চেষ্টা করছেন।
প্রথম দিন দাদার কীর্তি, দ্বিতীয় দিন বসন্ত বিলাপ, তৃতীয় দিন আনন্দ। তিনটিই চলচ্চিত্র জগতে হিট ছায়াছবি। প্রথম দুটি বাংলা। শেষেরটি হিন্দি। তারমধ্যে বসন্ত বিলাপের এবছর সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ। তরুণ মজুমদার পরিচালিত তাপস পাল অভিনীত ‘দাদার কীর্তি’ ছবিটি ব্রাত্য বসু নাট্যরূপ দিয়ে মঞ্চে এনেছিলেন ২০১৮ সালে। নৈহাটি ব্রাত্যজন প্রযোজিত নাটকটি বহরমপুরে মঞ্চস্থ হবে রবিবার। দ্বিতীয় দিনের বসন্ত বিলাপ নাটকটি নৈহাটি নাট্য সমন্বয়ের।
১৯৭১–এ হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘আনন্দ’ মুক্তি পেয়েছিল। রাজেশ খান্না এবং অমিতাভ বচ্চন এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। সেই গল্পেই লেখা হয়েছে বাংলা এই নাটকটি। নৈহাটি ব্রাত্যজন প্রযোজিত এই নাটকটি বহরমপুরে মঞ্চস্থ হবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রবীণ নাট্যশিল্পী মোহিত বন্ধু অধিকারী। ঋত্বিকের সম্পাদক বলেন, ” দুই পুরসভার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে আয়োজকরা আমন্ত্রণ পত্র না পাঠিয়ে সংস্কৃতি সংগঠনগুলিকে একজায়গায় ডেকে একটা বৈঠক করে তিনদিনের নাটকের কথা ঘোষণা করলে ভাল হতো।”
হঠাৎ তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ কেন নেওয়া হয়েছে ? তৃণমূলের সাংসদ অভিনেতা পার্থ ভৌমিক এর মধ্যে দুটি নাটকে অভিনয় করেছেন। নাটক তিনটিই ব্রাত্য বসুর লেখা। তাই কী তৃণমূলের ব্যানারে নাটকের শহর বহরমপুরে নাটকের প্রদর্শন ?
তৃণমূলের বহরমপুর সংগঠনের জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন ” যে নাটক তিনটি দেখানো হচ্ছে সেই নাটক আমার দেখে ভাল লেগেছিল। আমি নাটকের নিয়মিত দর্শক নই। আমার যদি নাটক ভাল লাগে তাহলে নাট্যপ্রেমি মানুষেরও ভাল লাগবে। এই অনুভব থেকে পার্থ দা’র সঙ্গে কথা বলে কান্দি ও বহরমপুরের নাট্যপ্রেমি মানুষদের দেখার সুযোগ করে দিতেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
বহরমপুর পুরসভার পুরপ্রধান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই তিনটি নাটক দেখতে শহরের নাট্য সংস্থাগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমাদের শহরে উন্নতমানের নাটকও প্রদর্শিত হয়। সেগুলি বাইরে যেতে পারে না অনেক সময়। নৈহাটির সঙ্গে সেই সম্পর্ক তৈরি হলে তাঁদের সঙ্গে ভবিষ্যতে নাটকের আদানপ্রদান করতে পারবে দলগুলি। তা ভেবেই আমরা তিনদিনের এই নাটক প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছি।”
সম্প্রতি বহরমপুর পুরসভার উদ্যোগে শহর জুড়ে পানীয় জলের পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। তিনবেলা রাস্তা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। একইভাবে কান্দি পুরসভার উদ্যোগে ফি রবিবার সাধারণ মানুষের হৃদরোগ, সুগার, প্রেসার পরীক্ষা করার ও বিনামূল্যে ওষুধও দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই পুর এলাকার অলিগলি পরিচ্ছন্ন রাখতে আবর্জনা তুলতে অতিরিক্ত চারটে ট্রাক্টর কেনা হয়েছে। সাফাইকর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে মাইকও। তুলনায় বড় বহরমপুর পুরসভায় অবশ্য এই কাজগুলি আগেই শুরু হয়েছে। মাইকের বদলে হুইসেল ব্যবহার করেন সাফাইকর্মীরা।


বহরমপুর শহরে পানীয় জলের পাইপ বসানোর কাজ চলছে। ছবিঃ বিদ্যুৎ মৈত্র
তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাগুলি সম্প্রতি পরিষেবা প্রদানে আরও বেশি যে সক্রিয় হয়েছে তা নজরে পড়েছে নাগরিকদেরও। তার কারণ কী? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন বছর খানেক দূরে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে পুরএলাকায় ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল। সেই ধাক্কা বিধানসভায় যাতে না লাগে তাই নগরবাসীকে ‘উন্নত’ পরিষেবা দিতেই উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূল। তারই অঙ্গ হিসেবে শহরে সংস্কৃতিমনস্ক মানুষদের কাছ পৌঁছতেই তৃণমূলের নাট্য প্রদর্শন বলেই মত তাঁদের। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বহরমপুর শহরের সংস্কৃতির পরিসরে প্রবেশ করেছিল তৃণমূল। যদিও সেবার বিধানসভার মন জিতেছিল বিজেপি।
অপূর্ব ও নাড়ুগোপাল সরাসরি সে কথা স্বীকার করেননি। অপূর্ব বলেন, ” শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পরে। তাকে আরও গুরুত্ব দিতে আমরা মানুষের সঙ্গে বারোমাস থাকি। সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতা স্বত্বেও আমরা পরিষেবাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। আর নতুন প্রজন্মকে সুস্থ সাংস্কৃতিক আঙিনায় আনতেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।”

নাড়ুগোপালও বলেন, ” নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে পরিষেবা প্রদানের মতো কাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল সংকীর্ণ রাজনীতি করে না। তবে এই ধরনের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সুস্থ সংস্কৃতি মনস্ক মানুষজনের কাছে পৌঁছানো যায়। আমাদের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদানও হয় বলে আমি মনে করি, যেটা সমাজ ও রাজনীতি উভয় ক্ষেত্রেই প্রয়োজন।”