

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ আগামী বছর বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। হাতে এখনও ১২ মাসেরও বেশি সময় বাকি। তারমধ্যেই ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে শাসকদল তৃণমূল। দিন দুয়েক আগে বড়ঞার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক প্রতিমা রজক শাসকদলে নাম লিখিয়েছেন এলাকার মানুষের উন্নয়নের স্বার্থে।
সোমবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। তিনিও বলেছেন, “বাংলাকে রক্ষা করতে, বেকারদের কর্মসংস্থান বাড়াতে, সর্বোপরি সামাজিক উন্নয়নের জন্য তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হলাম।” এসবের মধ্যে নওদার বাজার এলাকায় দেওয়াল দখল করে শাসকদলের পক্ষে হাওয়া দিয়েছেন জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সফিউজ্জামান শেখ ওরফে হাবিব মাস্টার।

তবে তাপসী মণ্ডল সিপিএম ছেড়ে বিজেপি হয়ে তৃণমূলে ঢুকেছেন। আর জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ, কংগ্রেসের দু’বারের বিধায়ক প্রতিমা রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছিলেন ২০২১ সালের পর। জেতা বিধায়ককে সরিয়ে সেবার শিলাদিত্য হালদারকে কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল বড়ঞায়। সেই অভিমানেই রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন তিনি।
স্বাভাবিকভাবেই অন্য দুই দলের দুই বিধায়ক শাসক দলে নাম লেখানোয় তৃণমূল নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করল বলেই ধরে নিচ্ছে রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহল। একইসঙ্গে শাসকদল তৃণমূলের মধ্যে টিকিট পাওয়া নিয়েও ২০২৬ এর নির্বাচনের আগে গোষ্ঠীকোন্দল বাড়বে বলেও তাঁদের দাবি। বিশেষ করে বড়ঞায় অপূর্ব সরকারের হাত থেকে ঘাসফুলের পতাকা নেওয়ায় চাপ বাড়ল ওই এলাকার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ ঘোষের ওপর।

নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের নাম জড়ানোর পর জেলায় তাঁর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল দলের। তাঁর ঘনিষ্ঠ জেলা সভাপতি শাওনী সিংহরায় সভাপতি পদ থেকে সরে যেতে সেই দূরত্ব এক আলোকবর্ষ ছুঁয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের এক নেতার। স্বাভাবিকভাবেই, বড়ঞাতে তিনি ২০২৬-এ টিকিট পাবেন কি না তাই নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা।
সেই প্রসঙ্গে জীবন বলেন, ” টিকিট পাব কি পান না তা আমি তো বলতে পারি না। যিনি টিকিট দেওয়ার মালিক সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে পারবেন। আমাকে যা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমি দলের সৈনিক হিসেবে তা পালন করছি।” তবে প্রতিমা রজকের যোগদানের বিষয়টি তাঁকে জেলা নেতৃত্ব জানায়নি বলে দাবি করেন জীবন। তিনি বলেন, ” আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন মানুষের জন্য কাজ করবেন বলে এতো ভাল কথা। আমাদের দলেরই তো শক্তি বাড়বে।”

একইভাবে নওদার বাজার এলাকায় দেওয়াল দখল প্রসঙ্গেও সামনে এসেছে ওই এলাকার বিধায়ক সাহিনা মমতাজের সঙ্গে এলাকার ব্লক সভাপতি সফিউজ্জামান শেখের সাপে নেউলে সম্পর্কের কথা। একাংশ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি, ” কৌশলে দল ও বিধায়কের ওপর চাপ বাড়ালেন হাবিব মাস্টার।” তাঁদের যুক্ত, সাম্প্রতিক অতীতে সর্বাঙ্গপুর কাণ্ড ও বিডিও অফিসে সরকারি কর্মীকে মারধরের ঘটনায় ব্যাকফুটে চলে যান হাবিব।
সেখান থেকে নিজেকে একটু একটু করে সরিয়ে তিনি সম্প্রতি ফের সক্রিয় হয়েছেন দলীয় কার্যে। তিনি ঘোষণা করেছেন, ” ২০২৬-এ নওদায় খেলা হবে।” কার বিরুদ্ধে খেলা হবে? তিনিই যে আগামী দিনে দলের বিধায়ক হওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি সে কথাই ঘনিষ্ঠ বৃত্তে বোঝাতে চেয়েছেন মাস্টার। হাবিব অবশ্য ঘুরিয়ে বলেন, ” বিধায়কের ওপর নির্ভর করে থাকলে নওদায় দল অচল হয়ে যাবে। সেটা হতে দেওয়া যায় না। আমি এখানে নিজের পরিকল্পনায় চলি, নিজের কৌশলে চলি। দলকে এগিয়ে রাখতে দলের ভাবমূর্তি মানুষের সামনে তুলে ধরতে আমি নিঃস্বার্থ।” আর সেই দলের কথা চিন্তা করেই আগেভাগে তিনি দেওয়াল দখল করেছেন।
দলনেত্রীর কথায় দলে রদবদলের হাওয়ায় ব্লক সভাপতি হিসেবে তাঁর নাম বদলের কথা জানিয়েছিলেন বিধায়ক। যদিও সেই হাওয়া ঝিমিয়ে এসেছে বঙ্গে। দূরত্ব ঘুঁচে ফের অভিষেক ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক হয়েছেন ২০২৬ এর আগে দলকে সংগঠিত ও শক্তিশালী করতে। এমনিতেই হাবিব অভিষেক পন্থী বলেই পরিচিত দলে। তাই কী এলাকায় সক্রিয় মাস্টার? প্রশ্নটা ঘুরছে শুধু নওদায় নয় জেলাতেই। .