বিদ্যুৎ মৈত্রঃ গনেশ চতুর্থীতে গনেশের ছবি পোস্ট করে তৃণমূলের এক নেতা লিখলেন,”ভগবান আমাদের সবাইকে সৎবুদ্ধি দিক।” আর নেতা পাল্টা লিখলেন, “ভগবান সব দুমুখো সুবিধাবাদীর মুখোশ খুলে দিক।” যা দেখে বাংলার শাসক দলের এই দুই নেতাকে নিয়ে সমাজমাধ্যমে খিল্লি করলেন নেটিজনরা। তারা আর কেউ নন। একজন কুনাল ঘোষ অন্যজন অভিনেতা সাংসদ দেব। উভয়েই গনেশের ছবি পোস্ট করেছেন নিজের নিজের ওয়ালে। সেখানেও নাম না করে দেব লিখেছেন “ভগবান আমাদের সবাইকে সৎবুদ্ধি দিক।” কুনাল লিখেছেন, “ভগবান সব দুমুখো সুবিধাবাদীর মুখোশ খুলে দিক।”
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক হত্যাকান্ডে ‘চাপে তৃণমূল’, দাবি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। এমন সময়, দলের হয়ে নাগারে গত প্রায় একমাস ধরে সমাজ মাধ্যমে ‘যুক্তির পসরা সাজিয়ে’ বিরোধীদের নরমে গরমে জবাব দিচ্ছেন কুনাল ঘোষ। কুনাল শাসকদলের রাজ্য সভার প্রাক্তন সাংসদ শুধু নন, তিনি দলেরও প্রাক্তন মুখপাত্র ও প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকও। যদিও কুনাল নিজেকে এখন একজন তৃণমূল কর্মী বলেই দাবি করেন। সেই কুনালের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের সময় ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেবের ঠান্ডা যুদ্ধের সাক্ষী বাংলা। দলের এই ক্রান্তিকালেও সেই লড়াই অব্যহত।
দিন তিনেক আগে ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে একটি ডায়ালাইসিস সেন্টারের উদ্বোধন করেন সাংসদ তথা অভিনেতা দেব। অথচ লোকসভা নির্বাচনের আগে ওই ডায়ালাইসিস সেন্টারের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই তথ্য তুলে ধরে কুনাল ঘোষ সমাজমাধ্যমে লেখেন, ” ঘাটাল হাসপাতালে ডায়ালিসিস ইউনিটের উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী, ১২ মার্চ, ২০২৪. কর্তাব্যক্তিরাও ছিলেন সেখানে।এরপর ক’দিন আগে ৪সেপ্টেম্বর ২০২৪, সাংসদ দেব ওটাই আবার উদ্বোধন করেন।উদ্বোধক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর নাম বদলে দেবের নাম আসে। মুখ্যমন্ত্রীর নাম পাঠানো হয় অনুপ্রেরণায়।এলাকার মানুষ তো অবাক !!সুপারস্টার বলেই এত বেনজির সাহসী কান্ডটা করা যায়।শুধু রিলের নয়, রিয়েল হিরো!” এমনকি ওই পোস্টে দেবকে ‘অভিনন্দন’ জানিয়ে কটাক্ষও করেন কুনাল।
তার উত্তর দিতে আসরে নামেন দেবও। তিনি ও সমাজমাধ্যমে কুনালকে নমস্কার জানিয়ে পাল্টা লেখেন “আমি দিদিকে অনুরোধ করেছিলাম ঘাটাল হাসপাতালে ডায়ালিসিস এবং সিটি স্ক্যান মেশিনের জন্য। সেটা দিদি মার্চ মাসে ভার্চুয়ালি ঘোষণা করেন। এক সপ্তাহ আগে মেশিনগুলো আসে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আমি এই মেশিনগুলো উদ্বোধন করি যাতে সাধারণ মানুষ ঘাটাল হাসপাতালের এই ডায়ালিসিস পরিষেবার ব্যাপারে জানতে পারে। আমার মনে হয় এর ফলে কোনো মুখ্যমন্ত্রী, সাংসদ, সুপারস্টার বা মুখপাত্র নয়, সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। ধন্যবাদ তোমাকে, তোমার মাধ্যমে এই পরিষেবার কথা আরও অনেকের কাছে পৌঁছে গেল।” শেষে কুনালকে ঠুকে দেব লেখেন, ” একটাই কথা বলব, আমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তাতে তথ্য যাচাই না করে সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য না করাই ভালো।”
বিষয়টি এরপরেও লম্বা হয়। কুনাল সরাসরি দেবের সঙ্গে কথা না বলে ফের সমাজমাধ্যমে পোষ্ট করেন। তিনি এবার চাঁছাছোলা ভাষায় দেবকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ” দিদির উদ্বোধন ছবিতেই স্পষ্ট। যত যন্ত্র আসুক, উদ্বোধন দুবার হতে পারে না। উদ্বোধক বদলায় না। এসব টুপি সিনেমায় দিও। আর পরিস্থিতি? আমরা, শ্রমজীবী সৈনিকরা বিষপান করে লড়ে অপ্রিয় হচ্ছি। তুমি চৈতন্যদেব সাজছো। পেশা, সৌজন্যের নামে কুৎসাকারীদের সঙ্গে আদিখ্যেতা করছ।” পরে অবশ্য উদ্বোধক শব্দটি মুছে দেবের উপস্থিতি কথাটা জুড়ে দেওয়া হয় ঘাটালের ওই হাসপাতালের উদ্বোধনী ফলকে। সন্ধ্যায় সেই ছবিও পোস্ট করেন কুনাল। ফের তিনি লেখেন “আমাকে উত্তর দেওয়ার আগে ভেবে দিলে ভাল হয়।” দেব অবশ্য পাল্টা আর কোনও উত্তর দেননি। কিন্তু উভয়েই গনেশের ছবি পোস্ট করেছেন। গনেশ পুজোর দিন গনেশের ছবি পোষ্ট করে সেই প্রসঙ্গেই যে একে অপরকে ঠুকেছেন কুনাল ও দেব তা বুঝে যান নেটিজনরা।

যা পড়ে এক তৃণমূল অনুগামী কুনালকে উদ্দেশে লেখেন, “ব্যাপারটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলে ভুল ভ্রান্তি দূর করা যেত কুনাল দা। এভাবে সোস্যাল মিডিয়ায় কাদা ছোড়াছুড়ি করে দলেরই নাম খারাপ হচ্ছে। আমার মতে দেব দা অতি সজ্জন ব্যক্তি বুঝিয়ে বললে শুনতেন।” এক শীর্ষ নেতা বললেন, “এসব এখন না করলেই হতো।”