শূন্য কংগ্রেস সাজাবে কে?

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্র, মুর্শিদাবাদঃ পরাজয় পেছনে ফেলে দিল্লির উড়ান ধরেছেন বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলের কর্মীদের সঙ্গে যখন ভোট পরবর্তী আলোচনা করছিলেন জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে সেই সময় তাঁর কাছে ফোন আসে দলের সর্বভারতীয় সভাপতির। মল্লিকার্জুন খড়গে ফোনে দিল্লিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে ডেকে পাঠান অধীরকে। সেইমতো শুক্রবার বহরমপুর ছেড়ে চলে গিয়েছে প্রদেশ সভাপতির কনভয়। শরীরের ভাষায় উধাও ‘বরাভয়’ দেওয়া মেজাজ, খানিকটা অস্বস্তি সঙ্গে অবিশ্বাস। এতদিনের বহরমপুর তাঁকে ভরসা করতে পারল না !

আরও পড়ুনঃ দ্বন্দ্বের আড়ালে মৈত্রীর কৌশলেই বাজিমাত তৃণমূলের

এই বিস্ময় জনতার একাংশেরও। বাচিক শিল্পী অনিন্দিতা দেব ঘোষ যেমন বলেন, “রাজনীতির উর্ধে উঠে অনেকেই চেয়েছিলেন এই মানুষটিই আমাদের সঙ্গে থাক।” বহরমপুর শহরে আজ যাদের বয়স পঞ্চাশ-ষাটের ঘরে তাঁরা জানেন বহরমপুরের ইতিহাস। চোখের সামনে এই মানুষটাকে দেখেই তাঁরা শিখেছিলেন কীভাবে ভেঙে গড়তে হয় নিজেকে। তবে আবার শূন্য থেকে রিস্টার্ট করতে সময় লাগবে।

রাজনৈতিক সচেতন শহরবাসী প্রদীপ চক্রবর্তী এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন। তাঁর আক্ষেপ “একসময় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অধীর ছিল। কিন্তু অধীরের কোন অধীর ছিল না কি জেলায়, কি রাজ্যে? অথচ অধীর একজন মানুষের নেতা।” ২০০৪ সালে ৪৮.৮৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জঙ্গিপুর থেকে জিতে প্রথমবার লোকসভার সাংসদ হয়েছিলেন প্রণব। তাঁর জয়ের নেপথ্য কারিগর ছিলেন অধীর চৌধুরী। যা ভারতের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হয়ে আছে।

বাম জমানায় বিরোধী কংগ্রেসের অবস্থা আজকের মতো তলানিতে ঠেকেনি। চলতি বছর সিপিএমের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে লড়াই করেছে কংগ্রেস। নির্বাচনে না জিতলেও জেলায় সিপিএমের একটা সংগঠন আছে। মূল সংগঠনে কথা ছেড়ে দিলেও জেলায় কংগ্রেসের না আছে শক্তিশালী ছাত্রদল না যুব সংগঠন। অধীর চৌধুরীর ভোট প্রচারে একক প্রচেষ্টায় বড় কোনও সভা করবার সাহস পর্যন্ত জোগাতে পারেননি সংগঠনের নিচুস্তর থেকে উঁচুস্তরের নেতারা। নির্বাচনে অনেকটা সেই সাপোর্ট দিয়েছে সিপিএম।

শুধু তাই নয় ভাঙনের জেরে আলগা হয়েছে কংগ্রেসের শহর সংগঠনও। না আছে পঞ্চায়েতে, না আছে ব্লকে না আছে জেলায় কোনও সৃষ্টিশীল নেতা। কোথাও কোনও সংগঠন নেই। যারা বুক চিতিয়ে লড়াই করবে দলের নেতাকে হারের মুখ থেকে জিতিয়ে আনতে, বলছিলেন প্রাক্তন শহর কংগ্রেস সভাপতি কার্তিক সাহা। দলে অসম্মানিত হয়ে একুশের ভোটের পর থেকে কার্তিক এখন তৃণমূলের সদস্য। তিনিও হয়ত মনে মনে চেয়েছিলেন অধীরের জয়।

মহঃ জহর নেই, অতীশচন্দ্র সিনহা ওরফে কাল্টুও ইহলোকে নেই। যাঁদের কথা শহরবাসী বিশ্বাস করতো। ভরসা করতো। “দাদা বিপদ বাড়ছে। হিন্দুরা ভাগ হয়ে যাচ্ছে।” এই তথ্যটুকু শেয়ার করবার নেতা খুঁজে পাননি বহরমপুরের কংগ্রেস সমর্থকরা।পৌঁছয়নি অধীর চৌধুরীর কানেও। যদিও একাংশ কংগ্রেসের নেতাদের দাবি, জহর লোক আনবার মতো কর্মকর্তা ছিলেন না। সেই হিসেবে আজকের জেলা কার্যালয় আলো করে থাকা ৯০ শতাংশ নেতারই সেই ক্ষমতা নেই বলে পাল্টা দাবি কংগ্রেস সমর্থকদেরও আছে। কিন্তু ভদ্র, নম্র নেতা জহরের প্রতি মানুষের ছিল বিশ্বাস। কাল্টু ছিলেন সংগঠকও। অধীর চৌধুরীও সেকথা জানতেন।

একদিকে জোড়াফুল শিবিরের অমোঘ হাতছানি, উল্টোদিকে দলের মধ্যে ক্রমশ সন্দেহের বিষ ছড়িয়ে পড়ায় আজ চৌচির মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস। সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তৃণমূলের বহরমপুর সংগঠনের সভাপতি অপূর্ব সরকার বলছেন, “মানুষের সেবা পরিষেবা যা অধীর চৌধুরী দিতেন আজ আমরা তৃণমূল কংগ্রেস তা পূরণ করে দিয়েছি।”

সোনিয়া গান্ধী ঘনিষ্ঠ অধীর সংসদীয় রাজনীতিতে আর ফিরবেন কিনা তা সময়ই বলবে। কিন্তু জাতীয় রাজনীতির দুঁদে নেতা অধীর যদি দিল্লিতে রাজনীতির কাজে জড়িয়ে পড়েন বহরমপুর একজন নেতাকে হারাবে, ব্যক্তি অধীর চৌধুরীর কোনও ক্ষতি হবে না। একজন জননেতাকে হারিয়ে ক্ষতি হয়ে যাবে জেলাবাসীর। দাবি কংগ্রেসের জেলা কমিটির সদস্য অর্ণব রায়ের।

২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে মানুষ প্রার্থীদের না জেতালেও পঞ্চায়েতের পর লোকসভাতেও অনেকের মন ঘুরেছে কংগ্রেসের দিকে। শতাংশের নিরিখে ভোট বেড়েছে। কিন্তু শূন্য কংগ্রেস সাজাবে কে? সেই প্রশ্নই এখন মাথাচারা দিচ্ছে জেলার চারদিকে। অর্ণব বলছেন “দেখা যাক কী হয়?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights