
বিদ্যুৎ মৈত্রঃ জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাকির হোসেনের বাড়িতে জিএসটি আধিকারিকরা তল্লাশি চালিয়ে কী পেয়েছেন তা অবশ্য জানাননি। তবে মঙ্গলবার সারা বাংলার সংবাদ মাধ্যমের নজর কেড়েছে জঙ্গিপুর। ঠিক বছর দুয়েক আগে যেমন চমকে দিয়ে কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থার গাড়ি ঢুকেছিল মুর্শিদাবাদের প্রথম সারির শিল্পপতির প্রাসাদে, ঠিক ততটা না চমকালেও কয়েক হাজার কৌতূহলী চোখ কিন্তু না ঘুমিয়ে জেগে ছিল মধ্যরাত অবধি। কিন্তু কেন?
এটা অস্বাভাবিক মোটেও নয়। একজন বিড়ি মালিক আজ এলাকায় শিক্ষানুরাগী তকমা পেয়েছেন। তাঁর মালিকানায় বিএড কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, অদূর ভবিষ্যতে জেলায় একমাত্র যে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হবে তার মালিকও জাকির হোসেন। সেই জাকির হোসেনের সাম্রাজ্যে কেন বারবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা উঁকি নয় রীতিমতো দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে? তারপর এলোমেলো করে খুঁজে বেড়ায় নথি। হাতে থাকা লাল দাগ দেওয়া তথ্যের সঙ্গে আতস কাঁচ ফেলে শিল্পপতির দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখছেন কোনও ভুল আছে কি না? তাহলে নিশ্চিত গলদ আছে আঁকেবাঁকে।
২০২৩ সালেও এমনই ঘটনা ঘটেছিল। জাকির বলেছিলেন, কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার টাকা বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গিয়েছেন আয়কর দফতরের কর্তারা। তারপর কেটে গিয়েছে আস্ত দুটি বছর। কেউ কোনও শেষ ফলাফল চাক্ষুষ করেননি আজও। কিন্তু কেন? এদিনও জাকির দাবি করেছেন, না তাঁকে জিএসটি কর্তারা ডেকেছেন না তাঁরা সর্বসমক্ষে জানিয়েছেন কী কী নিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। তবে বারবার জাকিরের বাড়িতে কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থার হানায় যে তাঁর প্রতি তাঁর কর্মীরা আস্থা হারাতে পারেন সেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে পরিচিত মুর্শিদাবাদের এই শিল্পদ্যোগী জনপ্রতিনিধি।
রাজনীতির আঙিনায় বিশেষ করে তৃণমূলের মতো গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ একটি দলের ক্ষেত্রে ঝামেলা ঝঞ্ছাট থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেখানেও জাকিরের জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়েনি, বলছেন অবশ্য তাঁরই ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতা। তবে কোন প্যাঁচে পড়ছেন জাকির? বারবার তাঁকে ‘হেনস্থা’ কেন হতে হচ্ছে?
বছর চারেক আগে নিমতিতা স্টেশনে যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যে ঘটনায় তাঁর জীবন থেকে স্বাভাবিক হাঁটাচলা হারিয়ে গিয়েছে সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কেন এখনও গ্রেফতার হয়নি ? এনআইয়ের কাছে তার কৈফিয়ত চেয়েছেন বিধায়ক? তবে কী সেক্ষেত্রেও কোন অদৃশ্য হাত আছে? ২০২৩ সালের পরের বছর ছিল লোকসভা নির্বাচন। দলের প্রতি অভিমান থাকায় রটেছিল কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর হাত ধরে জঙ্গিপুর আসনে সাংসদ নির্বাচনে লড়াই করলেও বিজেপিতে নৈব নৈব চ। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। ফের কী তাঁকে ঘুরিয়ে দলে ডাকছেন নরেন্দ্র মোদির দল?
মুর্শিদাবাদের উত্তরের তৃণমূল সংগঠনের সভাপতি খলিলুর রহমান বলছেন, ” জিএসটি আধিকারিকদের আসার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও যোগ নেই। এটা ঠিক যখন আমরা ব্যবসার বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দিই তখন কোনও ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। তা পরখ করবার জন্য দফতরের কর্তারা আসতেই পারেন। জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারেন। আর তারা আসা মানেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আসা ব্যপারটা এইরকম নয়।” নিমতিতা প্রসঙ্গে এনআইএর তদন্তে উষ্মা প্রকাশ করলেও খলিলুর বলেন, ” কেন মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়নি তা এনআইএ কর্তারা বলতে পারবেন। তবে তাঁদের প্রতি আমাদের আস্থাও আছে। ভরসাও আছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়?”
তবুও সন্দেহ থেকেই যায়?জঙ্গিপুর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সোমবার আচমকা রাস্তা ও নালা পরিদর্শনে যান বিধায়ক। কিন্তু রাস্তার গুণগত মান খারাপ হওয়ার অভিযোগ তোলেন ভাইস চেয়ারম্যান সন্তোষ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। আর সেখানেই না থেমে জাকির সরাসরি সন্তোষের বিরুদ্ধে কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ তোলেন। তবে কী সেক্ষেত্রে কোনও ষড়যন্ত্র হয়েছে দলের কারও পক্ষ থেকে? খলিলুর বলছেন, “আমি বাইরে আছি। ফিরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। কিন্তু ওই ঘটনার সঙ্গে এজেন্সির তল্লাশি যোগ বিন্দুমাত্র নেই।”
একই কথা বলছেন জঙ্গিপুরের কংগ্রেস নেতা হাসানুজ্জামান ওরফে বাপ্পা। তিনি বলছেন, ” এটা কাকতালীয় ব্যাপার। এই ঘটনা ব্যবসা সংক্রান্তই। অন্য কিছু নয়।” শমসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলছেন, ” জাকির দা একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি যেমন তেমনি একজন প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদও। এলাকার কত মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন উনি তাঁর খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন। উনি সর্বোচ করদাতা। আবার সত্যিই তো এনআইএ তদন্ত করে গেল মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার হল না। ইডি এল, শোনা গেল টাকা বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গেল। কিন্তু এতদিন কেটে গেল তারপর আর কোনও সাড়াশব্দ নেই। আসলে জাকির দাকে হয়রানি করছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে।”