সংবাদ প্রতিনিধি, মুর্শিদাবাদঃ ডোমকল জনকল্যাণ ময়দান আড়েবহরে কমেছে বেশ খানিকটা। তবু শেষ কবে এইরকম উপচে পড়া ভিড় দেখেছেন ডোমকলবাসী মনে করতে পারছেন না সুতনু হোড়, সুকান্ত মন্ডলরা। সুতনু ছোটখাটো একটি কোম্পানির সেলসম্যানের কাজ করে। সুকান্ত বাবার মুদিখানার দোকান সামলায়। তারাই দেখেছে শনিবার পালে পালে লোক গিয়েছে জনকল্যাণ মাঠে। সন্ধ্যায় ফিরতি পথে শুনেছে সিপিএম বসার জায়গা দিতে পারেনি।
রায়পুর রানিনগর বিধানসভার মধ্যে পরে। সুকান্ত’র বন্ধু ঋজু মন্ডল রায়পুরের বাসিন্দা। তিনি বললেন, “মানুষের টান দেখলাম আজ জনকল্যাণ মাঠের দিকে। ওখানেই সিপিএমের সেলিম আর কংগ্রেসের অধীর বক্তব্য রাখতে এসেছিলেন আজ। ভিড় হয়েছিল। বেশ ভিড় হয়েছিল।” এই ভিড় থেকে ফায়দা তুলতে পারবে বাম কংগ্রেস? এবার খানিকটা আমতা আমতা করে ঋজুর জবাব ” সেটা কী বলা যায়? ভোটে কী হয় সেটা তো ভোট না হলে বলা মুশকিল।”
আরও পড়ুনঃ মীনাক্ষী রুখে দাঁড়াতেই পিছু হটল পুলিশ
ডোমকল বিধানসভা মুর্শিদাবাদ লোকসভার মধ্যে পরে। সেই আসনে এবার বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর পক্ষে ভোট চাইতে ডোমকলে এসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। রুটি রুজির পক্ষে ভোট চাইতে নেমেছেন বাম-কংগ্রেস কর্মীরা। চাইছেন ধর্মের নামে ভেদাভেদ নয়। বরং ধর্মকে বর্ম করে যাঁরা ভোটের ময়দানে দৌড়ঝাঁপ করছেন তাঁদের দূরে সরিয়ে দুহাতে কাজের দাবির আওয়াজ তুলতে সংসদে। পাঁচ বারের সাংসদ অধীর নিজেও বহরমপুর কেন্দ্রের জোট প্রার্থী। তিনি অবশ্য এদিন বলে দিয়েছেন জনসভায় ” সেলিম দা জিতছেন।” এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন ডোমকলের প্রাক্তন বিধায়ক আনিসুর রহমান, কংগ্রেস নেতা জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি মোশারফ হোসেন ওরফে মধুও।
ডোমকলের বাসিন্দা আইনজীবী রবিউল ইসলাম মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ওই এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক এক্রামূল হক বিশ্বাসের ভাইপো। বলছেন “মানুষ তৃণমূল আর বিজেপি’র গোপন আঁতাত বুঝে ফেলেছে। এটা ভিড় নয় মানুষের জনরোষ। মানুষ বিকল্প হিসেবে অতীত ভুলে আজ বাম-কংগ্রেস জোটের হাত ধরেছে। এই ভীড় আর কোথাও যাবে না সেলিমের ভোটবাক্সেই পড়বে।”
রাজ্য জুড়ে ডোমকলের বদনাম আছে। নির্বাচন এলেই দেশের মিডিয়ার নজর পরে সীমান্তবর্তী এই মহকুমায়। যদিও শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানে প্রাণহানির কোনও ঘটনা ঘটেনি। ব্যতিক্রম হিসেবে তাও উঠে এসেছিল সংবাদ শিরোনামে। আগে এখানেই সিপিএম কংগ্রেস হানাহানিতে জড়িয়েছে বহুবার। এখন সেই জায়গা নিয়েছে তৃণমূল দাবি, এলাকাবাসীর। সেখানে চলতি লোকসভা নির্বাচনে সমীকরণ বদলে যাবে কোন অঙ্কে? সিপিএম জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন “মানুষ চোরেদের চিনে গিয়েছে। তাই যে ভিড় দেখেছেন তা আয়োজন করে হয় নি। এই ভিড় স্বতস্ফূর্ত ভিড়।আর তা ইভিএমে পড়বেই।”
রবিউল শনিবারের ভিড়কে সবচেয়ে বড় জমায়েতের তকমা দিলেও মোস্তাফিজুর বলছেন, ” এই জনকল্যাণ মাঠে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন সভা করতে এসেছেন যখন বামেরা এই রাজ্যে মধ্যগগনে তখন জনকল্যাণ মাঠ আজকের থেকেও অনেক বড় ছিল।” যদিও তাঁর মতে ” সেই মাঠে গত বারো তেরো বছরে এতবড় জমায়েত করতে পারেনি তৃণমূল।”
২০২৩ সালের নভেম্বরের শেষ দিন এই ডোমকলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের কেষ্টবিষ্টুরা চলে এসেছিলেন বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের বাড়ি। নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডের তদন্ত করতে। তারপর থেকেই তৃণমূলের অন্দরের দাবি দূর্বল হয়েছে দল। শারীরিক দূর্বলতা বেড়েছে বিধায়কেরও। এদিন তিনি বাম-কংগ্রেসের এই সভাকে অবশ্য কোনওদিক থেকেই গুরুত্ব দিতে নারাজ।
তিনি বলছেন, ” আপনাকে একটা ভিডিও পাঠাচ্ছি। অধীর চৌধুরী, মহম্মদ সেলিমের মতো জাতীয় স্তরের দুই নেতা যখন ডোমকলের মতো জায়গায় নির্বাচনী প্রচারে আসছেন তখন সেই ভিড় এত আলগা হবে কেন? এদিক ওদিকে মানুষজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। যত গাড়ি এসেছিল হয় করিমপুর না হয় জলঙ্গী না হয় ছয়ঘড়ি এইসব এলাকা থেকে। ডোমকলের মানুষজন ছিল কী? নিরপেক্ষভাবে দেখুন।”
শেষবেলায় কথা হল সুকদেব মন্ডলের সঙ্গে। বছর পঞ্চাশের সুকদেব বলছেন, “ডোমকল, রানিনগর এইসব এলাকায় হিন্দুর চেয়ে মুসলমানের বাস বেশি। তবে নির্বাচনে লড়াই হচ্ছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। মানুষ শেষ পর্যন্ত যদি ইভিএমের সামনে দাঁড়াতে পারে বলা যায় না সেলিম জিতেও যেতে পারেন।”