সংবাদ প্রতিনিধি, মুর্শিদাবাদঃ লোকসভায় জিতেও দূর্বল হল কংগ্রেস। বহরমপুর পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর গোপা হালদার দল বদলে নাম লেখালেন ঘাসফুলে। পরে তিনি বলেন, “উন্নয়নের শরিক হতে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসেছি।” তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে শাসকদলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন দলত্যাগী কাউন্সিলর। দলবদলের মঞ্চে এদিন হাজির ছিলেন বহরমপুরের সাংসদ ইউসুফ পাঠান, পুর-চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার, চেয়ারম্যান রবিউল আলম চৌধুরী ছাড়াও স্থানীয় নেতৃত্ব। নাড়ুগোপাল বলেন, “জনপ্রতিনিধিরা বুঝছেন বহরমপুরে তৃণমূল কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। তাই তাঁরা তৃণমূলে নাম লেখাচ্ছেন।”
কংগ্রেস অবশ্য বিষয়টি এত সহজভাবে দেখছে না। জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “অনেকেই মধুর ভান্ডারের খোঁজ পেতে চায়। সেই কারণেও দল ছেড়ে শাসকের দলে নাম লেখায়। একসময় ওই কাউন্সিলরই বলত, যে পরিবেশ থেকে তুলে এনে অধীর চৌধুরী তাঁকে কাউন্সিলর করেছে। কাউন্সিলর পদ চলে গেলেও দল ছাড়বে না। আজ সেই কথা গুলোই তাঁকে ফিরিয়ে দিচ্ছি।” ২৮টি ওয়ার্ডের বহরমপুর পুরসভায় ২২টি ছিল তৃণমূলের। এক বেড়ে জোড়াফুল হল ২৩। খাগড়া চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে যখন এই দলবদল হচ্ছে তখন জানা গেল আরও এক কংগ্রেস কাউন্সিলর শাসকের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ।
বছর দুয়েক আগে ২০২২ সালে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে কাউন্সিলর হয়েছিলেন গোপা। তিনি যে এলাকার কাউন্সিলর সেই এলাকায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধীন নতুন বাজারের পরিত্যক্ত আইসোলেসন ওয়ার্ড। সরকারি ওই হাসপাতাল চত্বরেই বসবাস করেন পুরনো হাসপাতালের প্রাক্তন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের পরিবার। বছরের পর বছর সরকারি জমি দখল করে তাঁরা বাস করেন। এলাকা সূত্রে জানা যায়, যাঁর সূত্রে ওই ঘরে বর্তমান প্রজন্মের বাস তাঁদের অধিকাংশজনই প্রয়াত। তবু সরকারি জমি জবরদখল করে বাস করছেন তাঁরা। ওই জমিতে বাস গোপারও।
সেখানে জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন মেকানিক্যাল লন্ড্রী তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরের ২৫ তারিখ সবে আকাশ ফর্সা হয়েছে। সেইসময় তৎকালীন সদর মহকুমাশাসক প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বহরমপুর থানার পুলিশ দিয়ে এলাকা ঘিরে রেখে বুলডোজার চালিয়ে শুরু করেছিলেন উচ্ছেদ অভিযান। পাঁচটি পরিবারের মাথার ওপর থেকে ছাদ সরে গিয়েছিল সেদিন। সেই সময় এলাকার পরিচিত মুখ গোপা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে। দাবি এলাকাবাসীর।
পরে বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরীও বিষয়টি নিয়ে সরব হন। মামলা গড়ায় আদালতে। আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়ে যায় সেই উচ্ছেদ অভিযান। ২০২২ সালে জেতার পর এলাকায় তৃণমূলের সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিলেন গোপা। সেবারও ছুটে গিয়েছিলেন অধীর। সেকথা জানিয়ে কংগ্রেসের দাবি, সেই সময় থেকেই তাঁকে দলবদলের চাপ দিচ্ছিল তৃণমূল। সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা ভোটেও তাঁর ওয়ার্ড থেকে লিড পেয়েছে কংগ্রেস। এদিন তিনি অবশ্য সেসব কিন্তু কিছু বলেননি। জয়ন্ত বলেন, “আধুনিক লন্ড্রী বসাতে যখন চাইছিল তৃণমূল সেদিন অধীর চৌধুরী না থাকলে বস্তি থেকে বাসস্থান আজ গঙ্গাতে চলে যেত।” যারা অসময়ে কংগ্রেস ছেড়ে চলে যায় তারা কখনও কংগ্রেসের ছিল না বলেও এদিন দাবি করেন জয়ন্ত।
.আরও পড়ুনঃ খেলোয়ার ইউসুফ,নেতা হবেন কবে?