লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় হিট “গো-ব্যাক” স্লোগান

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত ৪৩ দিনের ভোট উৎসব শেষ হল শনিবার। শেষ দফায় ফিরল বাংলার ‘ভোট’ সংস্কৃতি। অশান্তির বাতাবরণে নির্বাচন মিটল বাংলার ন’টি লোকসভায়। আর এই দামাল নির্বাচন শেষের দু’দিন পরেই জানা যাবে কার দখলে যাবে দিল্লির মসনদ।

তবে নির্বাচন ঘোষণা হওয়া ইস্তক হিট হল “গো-ব্যাক” স্লোগান। একইসঙ্গে স্মৃতির পাতায় ফিরে এলেন লালা লাজপত রায়, মেহের আলীও। সাইমন কমিশনে ভারতীয় সদস্যদের স্থান না দেওয়ায় লাহোরে কমিশনের সদস্যরা পৌঁছলে সাইমনকে লক্ষ্য করে ” সাইমন গো-ব্যাক স্লোগান” দিয়েছিলেন লাজপত রায়, মেহের আলীরা। সেই জনবিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে লালা লাজপত রায়কে নির্মমভাবে লাঠিচার্জ করা হয়েছিল। আঘাতের কারণে ওই বছরের শেষের দিকে তিনি মারা যান।

সেটা ছিল শাসকের বিরুদ্ধে বিরোধীদের স্লোগান। কিন্তু বাংলায় চলতি নির্বাচনে “গো-ব্যাক” স্লোগান ব্যবহার হয়েছে বিরোধীদেরই বিরুদ্ধে। অধীর চৌধুরী থেকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় হয়ে নির্বাচনের শেষ দিন সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী, তন্ময় ভট্টাচার্যও শুনেছেন গো-ব্যাক শ্লোগান। আর তা দেওয়া হয়েছে রাজ্যের শাসকদলের পক্ষ থেকে বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমকে লক্ষ্য করে। যার ফলে নির্বাচন পর্বে উত্তপ্ত হয়েছে একাধিক লোকসভা আসন।

কেন শাসকদলের লক্ষ্য বিরোধীরা? সেই প্রশ্নও জোড়ালো হয়েছে শেষ দিন। অথচ শাসকের পক্ষেই জনমত থাকার কথা। কিন্তু বলপূর্বক ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার কৌশল কেন এড়ানো গেল না লোকসভাতেও তা নিয়ে কমিশনকে বিঁধতেও ছাড়লেন না রাজ্যের তৃণমূল বিরোধীরা।

কমিশন সূত্রে জানা যায়, দেশ জুড়ে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৫৮.৩৪ শতাংশ ভোট পড়েছে শেষ দিন। সবথেকে বেশি ৬৯.৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছে বাংলায়। যা আগের নির্বাচনের তুলনায় অনেকটা কম। ষষ্ঠ দফায় ভোট পড়েছিল ৭৮.১৯ শতাংশ। তুলনায় বাকি দফার তুলনায় সপ্তম তথা শেষ দফায় অশান্তি ও হিংসার ঘটনায় নজর কাড়ল বাংলা। বিজেপি নেতা তথা বরানগরের বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষ সর্বসমক্ষে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে অপদার্থ বললেন। তাঁর নেতা শুভেন্দু অধিকারী ডায়মণ্ড হারবারে পুননির্বাচনের দাবি তুলেছেন।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ” বাংলায় আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। তৃণমূল নির্বাচনে সরাসরি অংশ নিতে ভয় পাচ্ছে। তৃণমূল বুঝতে পারছে সন্ত্রাস ছাড়া তার জেতার সম্ভাবনা নেই। সেই সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী আরও তৎপর হচ্ছে না কেন সেই বিষয়ে কোনও নির্দেশ আসছে কিনা কিংবা স্বেচ্ছায় তৎপর হচ্ছে না সেই কারণ জানার দরকার আছে।”

এরফলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলেও তিনি মনে করেন। পাশাপাশি সন্ত্রাস মুক্ত নির্বাচনের কথা দিয়েও তা রাখতে না পারায় কমিশনের বিশ্বাস যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বলে তিনি মনে করেন। পাল্টা মদন মোহন মালব্যের “সত্যমেব জয়তে” স্লোগানেই ভরসা রেখেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ” উৎসবের মেজাজে ভোট হয়েছে। আমাদের জেতা আসন এবারও জিতব। মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।”

আরও পড়ুনঃ বিক্রি হয়ে গেল “এই সময়”

স্বাধীনতা উত্তর ভারতবর্ষে যতবার যত নির্বাচন হয়েছে ইতিহাস চর্চাকারীদের দাবি, নেতাদের বক্তব্য শোনার জন্যও মানুষজন জনসভায় ভিড় করতেন। সেই গরিমাও হারিয়েছে চলতি বছরের ভারতের সাধারণ নির্বাচন। অশালীন ভাষা প্রয়োগ তো ছিলই। কমিশনের বারণ সত্বেও বাদ ছিল না ব্যক্তি আক্রমণও। সর্বোপরি নির্বাচনের মাঝামাঝি দলীয় কর্মীদের সামনে জাতি বিদ্বেষ বক্তব্য রেখে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে গরম করে তুলেছিলেন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। যতই শেষ ধাপে নির্বাচন গড়িয়েছে বৃত্তাকারে নেতা থেকে নেতায় ঘুরে ফিরে এসেছে সেই প্রসঙ্গ। ইতিহাস গবেষকরা বলেন, “যার ছাপ থেকে যাবে বহুকাল।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights