বিদ্যুৎ মৈত্র, মুর্শিদাবাদঃ মহিলা বনাধিকারিকের সঙ্গে অভব্য আচরণের জন্য কারামন্ত্রী অখিল গিরিকে মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপির পালের হাওয়াও কেড়ে নিয়েছেন তিনি। এই কারণে তিনি নানা মহলে তাঁর এই দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্তের প্রশংসাও কুড়িয়েছেন । পাশাপাশি সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে হুমায়ুন কবীরের ‘বিদ্বেষমূলক মন্তব্যে’র পরেও দলের তরফ থেকে কোনও বার্তা দেওয়া হল না কেন? হুমায়ুন কান্ডে কেন নীরব মুখ্যমন্ত্রীও।
আরও পড়ুনঃ সীমান্তে কাজ চালানোর ডিজি নিয়োগ করল কেন্দ্র
লোকসভা নির্বাচনের আগে ভরতপুরের বিধায়ক বলেছিলেন ” আমরা (মুসলিম) ৭০ শতাংশ, ওরা ৩০ (হিন্দু) শতাংশ।…” নির্বাচনের দিন বলেছিলেন “কেন একজন মুসলমান,বহরমপুর থেকে সাংসদ নির্বাচিত হবে না?” আর সেই সব ‘বিদ্বেষমূলক” মন্তব্যের পরে শাস্তি তো দূর, রাজ্য নেতৃত্ব কোনও মন্তব্য পর্যন্ত করেননি এখনও। সেই পর্ব মিলিয়ে যেতে না যেতে বিজেপি বিধায়কদের মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেওয়ার নিদান দিয়ে ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ফিরেছেন ভরতপুরের বিধায়ক।
শুনুনঃ দুই বিধায়কের দাবি পাল্টা দাবি
সংসদে মুর্শিদাবাদ, মালদহ সহ বিহারের কয়েকটি জেলা নিয়ে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। দলীয় সংসদের সেই পরামর্শে নিজেদের সম্মতি জানিয়েছিলেন বহরমপুর ও মুর্শিদাবাদের দুই বিজেপি বিধায়ক যথাক্রমে সুব্রত মৈত্র ও গৌরীশঙ্কর ঘোষ। আর তারই প্রতিক্রিয়ায় হুমায়ুন বলেছিলেন, ” এসব বন্ধ না করলে ব্যারাকস্কোয়ারে দু-লক্ষ লোকের জমায়েত করে এদের দুজনকে ওই লোকদের দিয়ে আন্দোলন করে ইদুরকে যেমন গর্তে পাঠানো হয় তেমনি গর্তে ঢুকিয়ে দেব।” সেই সময়ই বলেছিলেন, “যদি জেলার সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করে তাহলে মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেব।” .
তার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্র বলেন, “লুঠ, মারধর, জখম তৃণমূলের সংস্কৃতি।” শুধু তাই নয় শাসক দলের একজন জনপ্রতিনিধি অন্য দলের জনপ্রতিনিধিকে এই ধরনের হুমকি দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়াও জানতে চেয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে গোধরা কান্ডের প্রসঙ্গ টেনে বিতর্কে সুর চড়িয়েছিলেন বহরমপুরের বিজেপি সভাপতি শাখারভ সরকার। যার নিন্দা করেছিলেন বহরমপুরের বিধায়ক।
সেই ঘটনার পর কয়েকদিন কেটে গেলেও শাসকদলের না জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব না রাজ্য নেতৃত্ব কেউ এই নিয়ে হুমায়ুনের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনও মন্তব্য করেননি। বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ প্রমথেশ মুখোপাধ্যায় এই ঘটনায় নেতৃত্বের সংকট উপলব্ধি করেছিলেন। তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান জনপ্রতিনিধি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, “দলের একটা বার্তা না এলে হুমায়ুন থামবে না।”
এদিন তাঁর মত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ” এ ব্যাপারে আমার থেকে জেলা সভাপতির মন্তব্যই গ্রহণীয় হবে।” তৃণমূলের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সংগঠনের জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিড বল ঠেলেছেন রাজ্যের কোর্টে। তিনি বলেন, “বিধায়কের বিষয়টি আমার এক্তিয়ারে পড়ে না। এটা রাজ্য নেতৃত্বের বিষয় তাঁরা যা বলার বলবেন। তাঁরাও সব শুনছেন,দেখছেন।” তবে অখিল গিরির সঙ্গে বিষয়টিকে একাসনে বসাতে চাননি ডেভিড। তিনি বলেন, ” অখিল গিরি ও হুমায়ুনের বিষয় দুটি এক নয়। মহিলাদের জন্য আমাদের রাজ্যেই একমাত্র বাজেট হয়। যা সারা দেশের কাছে দৃষ্টান্তমূলক। আর তা হয়েছে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই।”