বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ হুমায়ুন কবীরকে বোঝাতে না পেরে শূন্য হাতেই ফিরতে হল মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। হুমায়ুন তবু ঝুঁকেগা নেহি। শেষ চেষ্টা করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দাবি সূত্রের।
শুনুনঃ হুমায়ুনের নিজের কথায়
দলের টিকিট না পেয়ে বেঁকে বসেছেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন প্রকাশ্যে। গুছিয়ে নিতে সমর্থকদের ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছেন ১৮এপ্রিল। তারমধ্যেই এস্পার ওস্পার হয়ে যাবে বলে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা।
কর্মীসভাকে উপলক্ষ করে বহরমপুরে শনিবার আসেন ফিরহাদ হাকিম। হুমায়ুনের সঙ্গে দেখা করে তার মান ভাঙানোর চেষ্টা করেন। সূত্রের দাবি, রাজ্যের মন্ত্রী তথা দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যকে কাছে পেয়ে হুমায়ুন তাঁর যন্ত্রণার কথা উগরে দেন তাঁর কাছে। সরাসরি প্রশ্ন করেন ” আমাকে কথা দিয়েও কেন শেষ বেলায় নাম মুছে দেওয়া হল। কেন বাইরের একজন অচেনা মানুষকে দল বহরমপুরে প্রার্থী করবে?” সঙ্গত প্রশ্নে অস্বস্তি এড়াতে পারেননি ফিরহাদও। তিনি বল ঠেলেছেন ‘দিদি’র কোর্টে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুস্থ হয়ে উঠলে কালীঘাটে ডাকতে পারেন হুমায়ুনকে। দিদি ডাকলে তাঁর মুখোমুখি বসেই যা বলবার বলে আসবেন তিনি দাবি হুমায়ুন ঘনিষ্ঠেরও।
আরওশুনুনঃ দল কী বলেছে?
হুমায়ুনের গোঁসার কারণ কী?
- ২০১২ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে ৩০ বছরের সম্পর্ক ত্যাগ করে যখন তৃণমূলে এলেন, তখন বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েই হুমায়ুন যোগ দিয়েছিলেন ঘাসফুল শিবিরে। বর্তমানে দলের অনেক নেতা আছেন যাঁরা দল ছাড়লেও বিধায়ক পদ ছাড়েন নি কখনও। সেদিক থেকে বিচার করলে হুমায়ুনের সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না, দাবি এক হুমায়ুন অনুগতের।
- জোড়া ফুল শিবিরে আসায় ‘দিদি’ তাঁকে মন্ত্রী করেছিলেন। কিন্তু উপনির্বাচনে হেরে যান হুমায়ুন।
- হুমায়ুন উপনির্বাচনে হেরে গেলেন ২০১৩ সালে। মন্ত্রীত্ব থেকে দিলেন ইস্তফা। হুমায়ুন ঘনিষ্ঠদের দাবি, “জেলায় ২০০৪ সালে দলের ভোট ছিল ৪ শতাংশ। সেই ভোট বেড়েছিল দাদার সৌজন্যে ৩২ শতাংশে। ”
- তাঁকে ওই বছরই সেন্টার সিল্ক বোর্ডের রাজ্য প্রতিনিধি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলায় কার্যকরী সভাপতি পদের দায়িত্ব পান।
- ২০১৩ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের ভোট বাড়ে ২৮ শতাংশ। পৌর নির্বাচনে বহরমপুরে খাতা খোলে তৃণমূল। পাঁচটি আসনে দ্বিতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল।
- ২০১৯ সালে দলের প্রতি অভিমানে বিজেপি-তে নাম লেখান হুমায়ুন। মুর্শিদাবাদ আসন থেকে পদ্ম প্রতীকে তৃণমূলের আবু তাহের খানের বিরুদ্ধে লড়াই করে হেরে গেলেন।
- ২০২০ সালে ভরা লকডাউনে ফের ঘাসফুলে ফিরলেন “বিতর্কিত” হুমায়ুন।
- ২০২১ সালে নির্বাচনে লড়াই করলেন রেজিনগরের চেনা মাটিতে নয় পেলেন ভরতপুরের আসন। জিতে এলেন সেখান থেকেও।
- সেই হুমায়ুন আজ দলের কোনও পদে নেই। জিতলেও আর মন্ত্রীত্ব ফিরে পাননি।
- অথচ জেলায় কেউ কেউ একাধিক পদে আছেন। হুমায়ুন না সরকারে, না দলে। হুমায়ুনের নিজের কথায় “রাজনীতিতে তাঁর থেকে ছোটরা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। কিন্তু তিনি শুধুই বিধায়ক।” সম্প্রতি তাঁর দাবিকেও দল গুরুত্ব দিচ্ছে না। পেলেন না লোকসভা নির্বাচনের টিকিটও। অথচ তাঁকে টেনে নামাচ্ছেন তাঁর দলেরই সহকর্মীরা, ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন বিধায়ক ঘনিষ্ঠ মহলে ।
এমনিতেই ‘বহিরাগত’ ইউসুফ পাঠানকে নিয়ে চরম অস্বস্তিতে দল। শনিবার রাতে একান্ত বৈঠকে নেতারা ফিরহাদকে সে কথা জানিয়েওছেন। কিন্তু ফিরহাদ তাঁদের জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত যখন হয়ে গিয়েছে তখন দলীয় প্রার্থীর হয়েই সবাইকে প্রচার করতে হবে। তাঁকে জিতিয়েও আনতে হবে। নেতারা পাল্টা প্রশ্ন করেন “জিতলে সাংসদ হবেন একজন আর তাঁর লোকসভা কেন্দ্র দেখবে অন্যজন? আমাদের দলে এমন হয় নাকি?” ফিরহাদ অবশ্য ব্যখ্যায় যাননি বলেই সূত্রের দাবি।
শুধু হুমায়ুনই নয়, আর এক বিধায়ক নিয়ামত সেখও মুখ ফিরিয়েছেন দল থেকে। সূত্রের দাবি, দুই বিধায়ক নতুন দল ঘোষণা করে তৃণমূল ছাড়বেন। কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়াই করবেন হুমায়ুন।